এম,এ,জাফর লিটন,শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) :
শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী,গালা ও সোনাতনী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষের দুর্বিসহ জীবন দৈনন্দিন অর্ধাহার-অনাহার দিন কাটে দারিদ্রতা-অভাব বঞ্চনায়।। বিশেষ করে বর্ষাকালীন সময়ে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন চিত্র সীমাহীন দুর্ভোগের। বন্যার সময় বাড়ি-ঘরে থাকে হাঁটুসম পানি। তখন মাচা কিংবা ভেলায় পরিবার পরিজন ও গৃহপালিত পশু -পাখি নিয়ে বসবাস করে। চারদিকে অথৈ পানি আর পানি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাদের বসবাস। একজনের বিপদে অন্যের ছুটে আসাও কঠিন ব্যাপার। এসময় এখানকার অধিকাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। জলদস্যু বা নৌ ডাকাতদের আনাগোনা বেড়ে যায়। চরের দরিদ্র অসহায় মানুষগুলো স্বপ্ন বুকে যখন গরু ,ছাগল ,ভেড়া লালন পালন করে । ঠিক সেই স্বপ্ন কেড়ে নেয় নৌ ডাকাতরা। যাতায়াত আদিকাল থেকে নৌকার উপর ও বালুচর হেটে নির্ভরশীলসহ শিক্ষা, চিকিৎসা নাজুক অবস্থার মাঝে কাটে জীবন চরাঞ্চলের শিশু শিক্ষার আলো, স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টির থেকে বঞ্চিত। বন্যা, অনাবৃষ্টি এবং দুর্ভিক্ষের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকারগ্রস্ত। প্রমত্তা যমুনার বুকে বানতিয়ার,সোনাতনী,ছোটচানতারা,বড় চানতারার চর, ঠুটিয়ার চর,মাকড়ার চর,বাঙ্গালার চর, রতনদিয়ার চর শাহজাদপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের অংশ । বালুচর আবাদ অনুপোযোগী হওয়ায় সেখানে কালাই,সরিষা,বাদামসহ বিভিন্ন ফসল নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আবাদ করার পর বন্যার করাল গ্রাসে প্রতি বছরই তা বিলীন হয়ে যায়। জীবনের প্রয়োজনে জীবিকার তাগিদে তারা সারা রাজধানী ঢাকা, মানিকগঞ্জ,টাঙ্গাইল ও নাটোর, রাজশাহীতে শ্রম ফেরি করে। অনেকে নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায়। সামর্থ না থাকায় অন্য কোথাও ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ী বসবাস সম্ভব না হওয়ায় তারা অতিকষ্টে বসবাস করে। শিক্ষা স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তি তাদের কাছে স্বপ্নসম। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে পড়া-লেখা হয় না ঠিকমত। কর্মরত শিক্ষকরা প্রায় অনুপস্থিত থাকেন। কলেজে পড়তে হলে নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে ধুধু বালুচর হেটে যেতে হয় প্রায় ১০ কি. মি. দূরে জামিরতা ও ঠুটিয়াতে আসতে হয়। চিকিৎসা সেবা পেতে ঝাড়-ফুঁক, কবিরাজি অথবা হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা পেতে তাদের নদী পাড় হয়ে পায়ে হেঁটে প্রায় ৬ কি. মি. পথ অতিক্রমে করে কমিউনিটি কিনিকে যেতে হয়। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীরা তেমন একটা যান না। বড় চানতারার আবুল কাশেম, জানান, চরের মানুষের দুঃখ র্দুদশার অন্ত নেই। নদী ভাঙ্গনে আজ নি.স্ব, রিক্ত ও অসহায়। এক সময় ঘরে গোলাভরা ধান ও সর্বদা প্রশান্তি ছিল। এখন কষ্ট আর অশান্তি অস্তি-মজ্জায় মিশে গেছে। সব হারিয়ে নানা প্রতিক’লতায় ঠুটিয়ার চরে বসবাস করে। মঞ্জুয়ারা বেগম ও জাহেদা বেগম বলেন,‘আমগোরে দুকের শ্যাষ নাই। পোলা-পানগো লইয়া বহুত কষ্ট করতাছিলাম।’এসব অঞ্চলে ভাঙ্গনের ভয়ে কেউ ঘর পাকা করতে পারেনা। ফলে দূর্বিসহ জীবন কাটে শাহজাদপুরের যমুনা চরবাসীর।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর