নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একেকটি কার্যকর উপজেলা কেন্দ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনা ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক।সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার একটি হোটেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালগুলোতে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি ও মানোন্নয়নে কী করণীয় সে সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো বিশ্বের অন্য আর কোনো দেশে প্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য জনবল নেই। আরও নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও ল্যাবরেটরি সুযোগ-সুবিধা। অভিযোগ রয়েছে এত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও বাস্তবতা হলো উপজেলা পর্যায়ে এখন রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না।অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, বর্তমান সরকার তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। সেখানে ডাক্তার না থাকায় গ্রামের মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে আসছে। কিন্তু এখানে এসে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, কেনাকেটা ইত্যাদি কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং ও সুপারভিশনে ঘাটতি থাকায় অনেকেই স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করেন না।তিনি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে স্থানীয় জনগণের খুব বেশি সম্পৃক্ততা নেই। অথচ সংশ্লিষ্ট উপজেলার কোন গ্রামে কোন মানুষ কোন রোগে অধিক আক্রান্ত হয়, বছরের কোন সময়ে কী ধরনের রোগের প্রকোপ থাকে, সেসব রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য কী ধরনের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন ইত্যাদিও জনপ্রতিনিধিরা প্রকৃতপক্ষে জানেন। অথচ চাহিদাপত্র স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ না করে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়।অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা অত্যাবশ্যক। কিন্তু বাস্তবে তাদের সম্পৃক্ততা কেবলই নামকাওয়াস্তে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি করে স্বাস্থ্যসেবা কমিটি রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কমিটির সভাপতি। প্রতি দুই তিন মাস পরপর এ কমিটির মিটিং করার কথা থাকলেও বছরেও একবার মিটিং হয় না।তিনি বলেন, উপজেলা কেন্দ্রিক কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনা ইউনিট গড়ে তুলতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনার ক্ষমতা দিতে হবে। এক্ষেত্রে থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ইউনিট প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তাছাড়া ডেপুটি সিভিল সার্জনের পদ তৈরিও করা যেতে পারে।উপজেলা হাসপাতালকে কার্যকর করতে ডাক্তারসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ওই নির্দিষ্ট এলাকার জন্যই জারি করতে হবে। এ পদ্ধতিতে যারা নিয়োগ পাবেন তারা কেউ বদলি হতে পারবেন না। তবে তাদের মধ্যে কেউ উচ্চতর বিষয়ে পড়াশুনা করতে চাইলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিজ যোগ্যতায় ভর্তি হতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে যারা চাকরি নেবেন তাদের জন্য বিশেষ ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, রেফারেল পদ্ধতি না থাকায় রোগীরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান। তৃণমূল পর্যায় অর্থাৎ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে রেফারেল পদ্ধতিতে রোগীরা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ পেলে সময়, অর্থ ও শারীরিক পরিশ্রম কম হত। এ কারণেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে কার্যকর স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনা ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি নিজে যেচে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ