আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া কানেকশন নিয়ে যেন বোমা ফাটিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তারা বলেছে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বড় ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের কাছে রাশিয়ার পক্ষ থেকে একটি ইমেইল পাঠানো হয়েছিল। ওই মেইলটি পাঠিয়েছিলেন বৃটিশ একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার সাবেক রিপোর্টার রব গোল্ডস্টোন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। রব গোল্ডস্টোনই ২০১৬ সালে রাশিয়ারি একজন আইনজীবী নাতালিয়া ভেসেলনিতস্কায়ার সঙ্গে বৈঠক আয়োজন করতে সহায়তা করেন। ওদিকে রোববার ট্রাম্প জুনিয়র স্বীকার করেছেন ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ক্ষতি হয় এমন তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আগ্রহী ছিলেন। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি ট্রাম্প জুনিয়রকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। জবাবে ট্রাম্প জুনিয়র সহযোগিতা করতে সম্মতি দিয়েছেন। এ জন্য এরই মধ্যে তিনি নিয়োগ করেছেন একজন আইনজীবী। তার নাম অ্যালান ফুটারফাস। তিনি বলেছেন, তার মক্কেল কোনো অন্যায় করেন নি। এসব খবর দিয়েছে অনলাইন নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন ও লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র ডেমোক্রেট সদস্য সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ার আইনজীবী নাতালিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প জুনিয়রের ওই বৈঠকের কথা ফাঁস হওয়ার পর তিনি ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে কথা বলতে চান। এর আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন একজন রাশিয়ান আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের আগে ট্রাম্প জুনিয়র ভেবেছিলেন তাকে হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য দেয়া হবে যাতে তার ক্ষতি হয়। একটি ইমেইলে এমনটা জানানো হয়েছিল তাকে। এটা ছিল ট্রাম্প জুনিয়রের পিতা ডনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া সরকারের সহযোগিতামুলক প্রচেষ্টা। ওই ইমেইল সম্পর্কে জানেন এমন তিনজন ব্যক্তি এ বিষয়টি জানিয়েছেন। ওই ইমেইলে রব গোল্ডস্টোন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, রাশিয়া সরকারের কাছে বড় ধরনের ধস নামানো যায় এমন তথ্য আছে। তবে ট্রাম্প প্রচারণাকে সহায়তায় মস্কোর প্রচেষ্টার বিস্তারিত এতে ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির হাজার হাজার ইমেইল হ্যাক করা হয় রাশিয়া থেকে। এর জন্য দায়ী করা হয় রাশিয়া সরকারকে। তবে এ প্রচেষ্টার সঙ্গে ওই যে ক্ষতিকর তথ্য বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে ইমেইলে এর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ মেলে নি ওই ইমেইলে। রাশিয়ার হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রে ওই হ্যাকিং করার এক সপ্তাহের কম সময় আগে ট্রাম্প জুনিয়র ও রাশিয়ার আইনজীবী নাতালিয়ার মধ্যে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের জামাই জারেড কুশনার ও ট্রাম্পের প্রচারণা দলের সাবেক প্রধান পল ম্যানাফোর্ট। এখন এই ইমেইলই আইন মন্ত্রণালয় ও কংগ্রেশনাল তদন্তকারীদের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তারা যাচাই করার চেষ্টা করছেন, ট্রাম্প টিমের কোনো ব্যক্তি রাশিয়া সরকারের সঙ্গে গত বছরের নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা করেছিল কিনা। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত যে, নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিজয়ী করতে রাশিয়া সরকার চেষ্টা করেছে। এ বিষয়ে ডেমোক্রেট নেতা মার্ক ওয়ার্নার বলেছেন, ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে রাশিয়ার আইনজীবীর ওই বৈঠকের কথা এর আগে আলোর মুখ দেখে নি। এখন এ খবর প্রকাশ হওয়ায় তা এক উল্লেখযোগ্য তথ্য প্রকাশ করে দিয়েছে। এটাই প্রথম প্রমাণ জনগণের কাছে প্রকাশ হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের সিনিয়র নেতারা রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করেছিল। এ বিষয়ে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, আইন বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিবৃতিতে ট্রাম্প জুনিয়র অপরাধ করার কথা স্বীকার করেছেন। এমএসএনবিসি-এর একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন বিদেশী কোনো নাগরিকের কাছ থেকে কোনো তথ্য নেয়া বা সহযোগিতা নেয়া একটি অপরাধ।উল্লেখ্য, ট্রাম্প জুনিয়র তার ভাই এরিক জুনিয়রকে নিয়ে বর্তমানে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্টের ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখাশোনা করছেন। তিনি একই সঙ্গে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের প্রধানও। তার আইনজীবী অ্যালান ফুটারফাস বলেছেন, এ অভিযোগে তার মক্কেলকে দোষী পাওয়া যাবে না।
দৈনিকদেশজনতা/ই সি
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

