ভোলা প্রতিনিধি ॥
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন জেলার নেতাদের পাশাপাাশি ভোলার চার আসনেও আওয়ামীলীগ বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতি মধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। গেলো ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নেতারা ঈদ শুভেচ্ছা পোষ্টার ব্যানার সাটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। তবে নতুন কয়েকজন ঈদ শুভেচ্ছার পোষ্টার সাটালেও পূরনোরা পোষ্টারে আগ্রহ দেখায়নি। তারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন আসনে নতুন নেতাদের আগমনে নিজ দলের মধ্যে বিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন উপজেলা উল্লেখযোগ্য। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের আগ্রহ না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আগ্রহের কমতি নেই। দেশের প্রেক্ষাপট যাই থাকুক আগামী নির্বাচন খুব প্রতিদন্ধিতাপূর্ণ হবে যে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তাই প্রার্থী নিয়েও ভোটারদের মাঝে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
জানাগেছে ভোলা জেলার চারটি আসনে নতুন পুরাতন মিলে বিএনপি আওয়ামীলীগের মধ্যে থেকে প্রায় ২০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ভাবেও লবিং তদবির চালাচ্ছেন। ইতি মধ্যে দু-দলের মধ্যে থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে, জনমত যাচাই বাঁচাই ছাড়া কাউকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এ ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনমত তৈরীর পাশাপাশি নেতাদের খুশি রাখারও কৌশল অবলম্বন করছেন।
ভোলা সদর-১: এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরন। এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে তোফায়েল আহমেদ নির্বাচন করে আসছেন।
ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন ): এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা আলী আজম মুকুল, নাজিউর রহমান এর পুত্র ডক্টর আশিকুর রহমান শান্ত। আশিকুর রহমান শান্ত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তোফায়েল আহমেদের সাথে প্রায় ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাফিজ ইব্রাহীম। তিনি ২০০১ সালে চার দলীয় জোট থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তোফায়েল আহমেদ বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার রাজনৈতিক আদিপত্ব্যের কাছে তখনকার আওয়ামীলীগ তথা তোফায়েল আহমেদ জীর্ণশীন হয়ে পরে। সে থেকে তিনি দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সংগঠনকে শক্তিশালী রূপে রুপান্তর করে। এখনো তাকে ঘিরেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐকবদ্ধ। তবে মামলার জটিলতার কারণে যদি মনোনয়নে সমস্যা হয় তাহলে তার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তার স্ত্রী বোরহানউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাফরুজা সুলতানা প্রার্থী হবেন। তিনিও মাঠে নেতাকর্মীদের সাথে নিবির যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এ আসন উদ্ধার করতে হলে তাদের বিকল্প নেই বলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান। এছাড়া এ আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোল রক্ষক আমিনুল ইসলামের নাম শুনা যাচ্ছে।
ভোলা-৩ আসন (লালমোহন-তজুমদ্দিন): আগামী নির্বাচনে এ আসনে সরকার দলীয় আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও সাবেক এমপি মেজর (অবঃ) জসিম উদ্দিন, ভোলা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের আলী স্বপন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম, এশিয়া গ্রুপ (বিডি) চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী লায়ন এম আর হাওলাদারের নাম শোনা যাচ্ছে।
ভোলা-৪ আসন (চরফ্যাশন-মনপুরা): এ আসনে সরকার দলীয় আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পরিবেশ ও বন উপ-মন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাবক, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের নাম শোনা যাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বিএনপি বা আওয়ামীলীগ মনোনীত ছাড়া কেউ সংসদ সদস্য হয়নি। এবারের নির্বাচনেও এই বড় দুই দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে বলেও মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৪টি আসনেই তাদের মনোনীত প্রার্থী দিবেন এমনটাই ভোলা সফরে এসে ঘোষণা দিয়ে গেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, তিনি ভোলা সদর আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্য আসনে নতুন মুখ মনোনয়ন পাবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, অন্যান্য আসনে কয়েক জন ত্যাগী নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তবে বিষয়টি দলের চেয়ারপার্সন ও নীতি নির্ধারকরা বিবেচনা করবেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম