২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:১৪

নরসিংদীর লটকন যাচ্ছে বিদেশেও

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর লটকন দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্থানীয়ভাবে ‘বুগি’ হিসেবে পরিচিত এ জংলি ফল বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। প্রতি বছরই বাড়ছে লটকন বাগানের সংখ্যা। বর্তমানে নরসিংদীর উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের লালমাটি এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মণ লটকন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার শিবপুর, বেলাবো ও রায়পুরা উপজেলার লাল রঙের উঁচু মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান আছে। তাই এই এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বিগত বছর জেলার ৬২৫ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪২ হেক্টরে। লটকন চাষিরা জানান, এক সময় ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে অযত্নে বেড়ে উঠত এই ফলের গাছ। লটকনকে লোকে চিনত ‘জংলি ফল’ হিসেবে। অথচ এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে মাঠের পর মাঠজুড়ে আবাদ করা হচ্ছে এই লটকনের। অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু লটকনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। লটকন অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শিবপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকনের বাগান রয়েছে। চাষিরা জানান, একটি পূর্ণ বয়স্ক লটকন গাছে ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। মৌসুমি এই ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মরজাল, চৈতন্য ও শিবপুরে গড়ে উঠেছে লটকনের বৃহত্ বাজার। শিবপুর উপজেলার আজকেরতলা গ্রামের আবদুল আজিজ নামে এক লটকন চাষি জানান, গাছের পুষ্টির সুষমতা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছের গোড়া থেকে প্রধান কাণ্ডগুলোতে ঝোপায় ঝোপায় এত বেশি ফল আসে যে তখন গাছের ডাল পর্যন্ত দেখা যায় না। একই উপজেলার লাখপুর গ্রামের সুলতান উদ্দিন বলেন, এখন কোয়ালিটি ভেদে লটকন ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। খুচরা দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। পাইকাররা বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া শিবপুর ও মরজাল বাজার থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ক্রেতারা এসে লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার উত্পাদিত শত শত মণ লটকন স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়েও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার যাচ্ছে। সুস্বাদু হওয়ায় বিদেশেও রফতানি হচ্ছে এখানকার উত্পাদিত লটকন। বেলাব উপজেলার আবদুল্লাহ নগর গ্রামের লটকন চাষি নুরুল আমিন ভূঁইয়া বাচ্চু বলেন, উপযোগী আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামটাও আশানুরূপ পাচ্ছি। একই উপজেলার রাজারবাগ গ্রামের মো. সবুজ মিয়া বলেন, বিঘাপ্রতি লটকন বাগান লাখ টাকা বিক্রি করা যায়। বটেশ্বর গ্রামের সোহেল মিয়া জানান, আশা করছি আমার দুই বিঘা জমির লটকন বিক্রি করতে পারব প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। যোশর ইউনিয়নের ছোটাবন্দ গ্রামের লটকন চাষি তালেব হোসেন জানান, তার বাগানে মোট ১৫০টি লটকন গাছ আছে। গত বছর ২০টি গাছে ফলন আসেনি। তারপরও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে সব ব্যয় বাদ দিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। লালমনিরহাট থেকে আসা মরজাল বাজারে পাইকারি লটকন ব্যবসায়ী করম আলী জানান, এবার ফলন ভালো, আকারেও বড় হওয়ায় লটকনের স্বাদও। ক্রেতারা লটকন খেয়ে মজা পাবে। নরসিংদীর লটকনের চাহিদা বেশি। নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. লতাফত হোসেন বলেন, লটকনে রোগ বালাইয়ের তেমন সংক্রমণ না হওয়ায় উত্পাদন খরচ কম ও ফলনও ভালো। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রফতানি হওয়ায় লটকনের ন্যায্য দামও পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে নরসিংদীতে প্রতিদিনই লটকন চাষের প্রসার ঘটছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ
প্রকাশ :জুলাই ৬, ২০১৭ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ