২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:২০

মধ্য আষাঢ়েও করতোয়ার বুকে নেই পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নদী পাড়ের মানুষেরা যখন ভয়াবহ বন্যায় কবলিত তখন পঞ্চগড়ের নদীগুলো পানি শূন্য। বর্ষণের ঋতু বর্ষাতেও  পানি নেই  জেলার প্রধান নদী করোতোয়ায়। অথচ করতোয়া নদীকে ঘিরেই পঞ্চগড় জেলা শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল । তখন দু’কূল প্লাবিত করে বয়ে যেত  করতোয়া। নীল জলের এই  স্রোতস্বিনী সময়ের বিবর্তনে বর্তমানে শীর্ণ হয়ে পড়েছে । মধ্য আষাঢ়েও করতোয়া যেন মরা খাল । জেলার ৩৪ টি নদ নদীর অবস্থা একই রকম।

করতোয়ার উজানে পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার আমবাড়ি কালকাটায় একটি ব্যারাজ নির্মাণ করে পুরো পানিই প্রত্যাহার করছে ভারত। ফলে করতোয়া সহ ছোট নদীগুলো আজ পানিশূন্য। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে শোভা পায়  কৃষকের চাষ করা বোরো ধান।

এক সময় যে করোতোয়া একূল-ওকূল দেখা যেত না, বন্যার সময় শো শো শব্দে  পানি প্রবাহের সাথে কৃষকের জন্য বয়ে নিয়ে আসতো পলি মাটি সেখানে এখন পানি নেই, নেই মাছও। এখন সে শুকনো, প্রায় মরে যাওয়া এক নদী । এই জেলায় প্রায় ১১৫ কিলোমিটার প্লাবিত করেছে করোতোয়া।

শুধু করতোয়াই নয়, উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার আর নদী শাসনের কারণে  হারিয়ে যাচ্ছে পঞ্চগড়ের ছোট-বড় মোট ৩৪টি নদী। আষাঢ়ের এই দিনগুলোতে বুক উজার করে নদীর বয়ে চলার কথা থাকলেও নদীগুলো এখনো পানি শূন্য। পানির প্রবাহ না থাকায় মরা খালে পরিণত হয়েছে এসব নদী। নদীগুলোর বিস্তীর্ণ বুকে শোভা পাচ্ছে বালুর চর আর ধানক্ষেত। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে কৃষি, মাছ, জলজ উদ্ভিদসহ প্রাণীকুলেও । হুমকিতে পড়েছে নদী কেন্দ্রিক কৃষকদের সেচ ব্যবস্থা। জেলায় দেখা দিয়েছে দেশী মাছের সংকট। জীবিকা নির্বাহ নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন জেলেরা।

এদিকে জেলার করোতোয়া,ডাহুক,ভেরসা,চিলকা,চাওয়াই নদীতে বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে মরে যাচ্ছে এসব নদী। শাঁও ও করতোয়া নদীর মিলন স্থল এবং বাংলাদেশে প্রবেশ মুখে তেতুঁলিয়া উপজেলার ভদ্রেশ্বর এলাকায় মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে করতোয়ার বুকে সৃষ্টি হয়েছে বালির বাধ। ফলে একদিকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার অন্যদিকে এই বালির বাঁধের কারণে করতোয়া হয়ে পড়েছে পানিশূন্য।

পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় ৩৪টি নদী। করতোয়া,ভেরসা, চাওয়াই, মহানন্দা, ডাহুক, বেরং, টাঙ্গন, তালমা, গোবরা,আলাইকুমারী,চিলকা, সহ সব নদীর অবস্থা করতোয়ার মতোই নাজুক। প্রায় সব নদীর উৎসস্থল ভারতের অভ্যন্তরে হওয়ায় বছর জুড়ে এই নদীগুলোতে পানি থাকে না।

করতোয়া নদী পাড়ের কৃষক সদর উপজেলার ব্যাংহারি এলাকার মতলুব আলী (৬৫)  জানান, আষাঢ় মাস শেষ হয়ে যায় কিন্তু করতোয়ায় পানি নাই । অথচ ১০-১৫ বছর আগে চৈত্র মাসেও খারাহাত পানি থাকতো।

কাজিপাড়া এলাকার জেলে মাসুম আলী  ( ৫৫) জানান, আগে মাছে মাছ ছিল । নদীতে পা ফেল্লেই মাছ এসে ঘিরে ধরতো। এখন সারাদিন মাছ ধরলে হাফ কেজির বেশি পাওয়া যায়না। তিনি বলেন,জেলার জেলেরা এখন অন্য কাজ কাম করছে। মাছ  ধরে জীবিকা নির্বাহ করা যাচ্ছেনা।

পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, উত্তর প্রান্তের এই জেলার উপড় দিয়ে ৩৩ টি নদী প্রবাহিত হয়েছে । অলিখিত ভাবে আরও একটি নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে ।  দেশের আর কোন জেলার উপর  দিয়ে  এতো নদী প্রবাহিত না হলেও  ৩৩ টি নদীর অবস্থা ভীষণ নাজুক ।

পঞ্চগড়  পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ইতোমধ্যে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় করতোয়া নদীর ৫ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার । এবছর আরও ৭৭ কিলোমিটার খননের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে । একইভাবে অন্যান্য নদীগুলো খননের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুলাই ৫, ২০১৭ ৩:৩৯ অপরাহ্ণ