সিরাজগঞ্জ থেকে এম.এ.জাফর লিটন:
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর বন্যার পানিতে প্লাবিত এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম শাহজাদপৃুরের গো-চারন ভূমি। ফলে দুগ্ধ শিল্পের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চলের খামারীরা গো-খাদ্য সঙ্কটে ভূগছে। সেই সাথে গবাদী পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারের মালিকরা। পানির প্রবল তোপে বড়াল নদীর তীরে রাউতারা- নিমাইচড়া বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে মূলত গো-চারন ভূমির বিশাল এলাকা মুহুর্তেই প্লাবিত হয়। সাথে সাথে চারন ভূমির হাজার হাজার গরু শ্যালো নৌকা দিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। কিন্তু গো-খাদ্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারন করেছে। বাংলাদেশের সিংহভাগ দুগ্ধ উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে শাহজাদপুরের পরিচিতি দেশে বিদেশে। এ জনপদে রয়েছে হাজার হাজার দুগ্ধ গরুর খামার। আর এর সুবাদে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করে আসছে। কয়েকদিনের প্রবল বর্ষনে উপজেলার বেশিরভাগ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গো-খামারীরা দুগ্ধ গাভী নিয়ে বসতবাড়ীতে রাখতে হিমসিম খাচ্ছেন। সরে জমিনে ঘুরে উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ী ও বাথান এলাকার গো-খামার গুলির বেহাল অবস্থা লক্ষ করা গেছে। খামারের ঘরগুলি পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। গরুগুলি নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছে। এ দিকে বন্যার পানিতে চারন ভূমির ঘাস ডুবে যাওয়ায় গো –খাদ্য: খড়, খৈল, ভূষি’র মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। চলনবিল অঞ্চল থেকে নৌকাযোগে ব্যবসায়ীরা খড় শাহজাদপুরে বিক্রি করতে আসছেন।
১৯৭৩ সালে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ীতে স্থাপনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার দুগ্ধ গরুর খামার। শাহজাদপুরের পশ্চিমাঞ্চলে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গো-চারন ভূমি দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ দুগ্ধ গরুর খামার গড়ে রাতারাতি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে থাকে। শাহীওয়াল, হরিয়ানা, মুলতানী, সিন্ধি, মন্টেগোমারী জাতের স্বাভাবিক গরুর বিভিন্ন প্রজাতির প্রজনন ঘটিয়ে জাত সৃষ্টি করে। এসব গরুর দুধ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে উৎকৃষ্ট প্রজাতির এবং বিশ্বের যে কোন অঞ্চলের চেয়ে বেশি ফ্যাট সমৃদ্ধ। ১৯৭৭ সালে বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটাকে দুগ্ধ সমবায় ইউনিয়নের নামে নতুন নামকরণ করলে সদস্য ভূক্ত এসব খামারীরা প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করে মিল্ক ভিটা কারখানায়। এসব দুধ দিয়ে সাধারণত গুড়ো দুধ, আইসক্রিম, ঘি, মালাই, মাঠা, রস মালাই, চকলেট, চকলেটবার ইত্যাদী তৈরী করা হয়ে থাকে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম