সিরাজগঞ্জ থেকে এম.এ.জাফর লিটন:
ঈদ আনন্দকে ঘিরে শাহজাদপুর শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত করতোয়া নদীর উপর নির্মিত করতোয়া সেতুতে বিনোদন প্রেমিদের ভীড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন বিকেল ৪টার পর থেকেই সেতু পরিণিত হয় বিনোদনপ্রেমীদের মিলনমেলায়। সারা দিনের কর্মব্যস্ত মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বেষ নিতে বিকেলের হিমেল হাওয়া আর করতোয়া নদীর নৈস্বর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতেই মূলত সেতুটিতে ভীড়। পূর্ব শাহজাদপুরবাসীর সাথে শহরবাসীর যোগসূত্র এই সেতুটিকে বেছে নেয়া হয়েছে বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। বিনোদন প্রেমীদের কাছে নদীর দুধারের সৌন্দর্য, কখনও পানিতে টইটুম্বুর কখনও নদীর মাঝে বিস্তীর্ণ বালুচর সবাইকে মুগ্ধ করে। গোধূলীর পরন্ত বিকেলে সূর্যাস্তের লাল আভা অথবা সন্ধ্যা রাতে সোনালী জোস্নায় নীল আকাশে তাঁরাদের মিতালী সে যেন সবাইকে হারিয়ে দেয় নতুন স্বপ্নে। গ্রীষ্ম মৌসুমে বিকেল থেকে রাত ১১/১২টা পর্যন্ত জমিয়ে আড্ডা দেয় বিনোদন প্রেমীরা। আর শীতের মৌসুমে ঘনঘুয়াশা আর ঠান্ডা হাওয়ায় আঁধার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই সবাই ফিরে যায় যার যার নীড়ে।
শিল্প ও ব্যস্ততম জনপদ শাহজাদপুর দেশের প্রাচীণ একটি উপজেলা। এখানে রয়েছে ইসলাম প্রচারক হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা (রহঃ) এর মাজার ও প্রাচীণ দুটি মসজিদ। বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কাছারিবাড়ী ও যাদুঘর। এছাড়াও দেশের বৃহত্তম কাপড়ের হাট। অসংখ্য ব্যাংক বীমা, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকুরী ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে মানুষ এই শহরে অবস্থান করে থাকেন। এখানকার জীবন যাপনের মান প্রায় রাজধানী ঢাকার মতই। শাহজাদপুরে রয়েছে অনেক ধনাঢ্য ও অভিজাত পরিবার। এ শহরের মানুষ বিনোদন ও সংস্কৃতি প্রিয়। অপার সম্ভবনার এই জনপদে শিল্প, কৃষি উৎপাদন ও বিপননের বিস্তার থাকলেও এখানে একটি বিনোদন পার্ক না থাকায় অস্বস্তিতে আছে বিনোদনপ্রেমিরা। রবীন্দ্র কাছারি বাড়ী বাহিরের দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষনের হলেও শাহজাদপুর বাসীর কাছে চিরচেনা। এছাড়াও শহরের মূল পয়েন্টে কাছারিবাড়ীর অবস্থান হওয়ায় এখানে নেই নির্মল খোলামেলা বাতাস। তাই বিকেল হলেও প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে ছুটে চলে করতোয়া সেতুতে। সেতুর উপর রয়েছে চটপটির দোকান। চেয়ার পেতে অনায়াসেই মেলে ফুচকা, চটপটি, হালিম, বাদাম ও ঝালমুড়ি। সেতুর উপরে যেন নারী-পুরুষের মিলনমেলা। বিশেষ করে ঈদূল ফিতর, ঈদূল আযহা, দূর্গা পূজায় সেতুটি বিনোদন প্রেমীদের দখলে চলে যায়। এতে যানবহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। দিন যত গড়া্চ্ছে ততই করতোয়া সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বিনোদন প্রেমীদের কাছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম