২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৪৯

২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ

দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:

সদ্য শেষ হওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ কমেছে, যা প্রায় ১৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। রেমিটেন্স প্রবাহে বড় মাপের এ ধাক্কায় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর না করে শক্তিশালী রিজার্ভ গড়ে তুলে দ্রুত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিকল্প তৈরি করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, যা এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। এ হিসাবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। টাকার অংকে এর পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ২৯৪ কোটি। রেমিটেন্স প্রবাহের এ খরাকে দেশের অর্থনীতিতে কালো মেঘ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, শিগগিরই পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে সরকারের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এক বছরের ব্যবধানে ১৪ শতাংশ রেমিটেন্স কমে যাওয়া অনেক বড় ধাক্কা। কারণ বর্তমানে রেমিটেন্সই রিজার্ভের বড় অংশের যোগানদাতা। এখন বিদেশিদের পাঠানো টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন না হয়ে অন্য চ্যানেলে আসছে। বিভিন্ন অবৈধ পথে টাকা পাঠাচ্ছেন বিদেশিরা। এসব অবৈধ পথ বন্ধ করতে হবে। এছাড়া এখন বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর লোক দেশে ফেরত আসছে। আর দেশ থেকে বিদেশে লোক যাচ্ছে কম। এর মধ্যে অদক্ষ শ্রমিকই বেশি। রেমিটেন্স বাড়াতে হলে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর বিকল্প নেই।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘রেমিটেন্স ধসের এ ধারা অব্যাহত থাকলে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। এখনো আমাদের দেশের বেশিরভাগ পরিবার একজন সদস্য বিদেশ থাকে, তার উপার্জনের ওপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল।’ তিনি বলেন, ‘মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে শুধু রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর না করে সরকারকে দ্রুত দেশের রপ্তানি বাড়াতে হবে। এজন্য রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে।’ বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশের রিজার্ভ পুরোপুরি রেমিটেন্সের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং সংকট দূর করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা ছাড়া মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া সম্ভব নয়।’ তিনি জানান, দেখুন গত এক বছর ধরে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে কমতে শেষ পর্যন্ত একটা বড় ধাক্কা এল। তাই এটা স্পষ্ট করে বলা যায়, রেমিটেন্স খরা সহসাই কাটছে না। বিশ্ব ব্যাংকের এ অর্থনীতিবিদ বলেন, গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিক প্রভৃতি রপ্তানিমুখী দ্রুত পাখা মেলতে হবে। এজন্য সরকারকে জমি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হবে। তা না হলে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।   তিনি আরো বলেন, ‘এতদিন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স কমলেও গত বছর যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরাপের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এটা শুরু হয়েছে হলি আর্টিজান হামলার পর থেকেই। সুতরাং রেমিটেন্স ধসের পেছনে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও অনেক কারণ আছে।’

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জুলাই ৪, ২০১৭ ১১:২১ পূর্বাহ্ণ