উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :
এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহ ও সমাজের নতুন হুমকি হিসাবে ইয়াবা সহ কৃত্রিম নানা মাদকের তীব্রতা বৃদ্ধিকে মূল্যায়ন করেছে জাতিসংঘ। এ অঞ্চলের উদীয়মান রাষ্ট্রগুলোতে এসব মাদকের উৎপাদন, পাচার ও ব্যবহারের তীব্রতা বৃদ্ধিকে জাতিসংঘ নতুন হুমকিরূপে নির্ণয় করছে। বিশ্ব মাদকবিরোধী দিবসে ইয়াবা সহ মাদকের বিস্তৃতি ঘটাতে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের রতি, মহারতিরা নতুনভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
কয়েক সপ্তাহ পূর্বে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াংরাই প্রদেশের একটি পুলিশ চেকপোষ্টে ২০ লাখ মেথাম্ফিটামিন বডি জব্দ করে পাচার প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে। এ সময় যৌথবাহিনী ও পুলিশের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে এক মাদক পাচারকারী নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে কুখ্যাত গোন্ডেন ট্রায়াঙ্গল অঞ্চল থাইল্যান্ড, লাওস, মিয়ানমারের কাছে বলে ভয়েস অব আমেরিকা বা ভোয়া জানিয়েছে।
জাতিসংঘের অফিস অব ড্রাগস এন্ড ক্রাইমস (ইউএনওডিসি) সবার দৃষ্টিগোচরীভূত করে বলেছে, সম্প্রতি এশিয়া অঞ্চলে বৃহদায়তনের মেথাম্ফিটামিন উৎপাদন, পাচার, ব্যবহার ও আটকের তীব্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটির তথ্যমতে ২০১৫ সালে পূর্ব-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ২৮৭ কোটি মেথাম্ফিটামিন বা ইয়াবা বডি তৈরির উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত উদ্ধার করা হয়েছে। যা ২০১১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
কৃত্রিম এসব মাদক, সেবনকারীরা চিত্ত প্রভাবকারী পদার্থ বা বস্তু হিসেবে ব্যবহার মহামারী আকার ধারণ করে। ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের মতো উদীয়মান দেশগুলোতে এসব মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা সাময়িক, শারীরিক প্রশান্তি অনুপ্রাণিত ভেবে ব্যবহার ও পাচারের হার বাড়াচ্ছে কম্বোডিয়া, চীন, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনাম। মেকং নদী উপত্যকা জুড়ে এসব দেশগুলোতে বছরে অন্তত ৪০ বিলিয়ন ইয়াবা ও হেরোইন উৎপাদন ও পাচার হয়ে থাকে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মিয়ানমার, পূর্বাঞ্চলীয় চীন ও তাইওয়ানকে ঘিরে মাদক উৎপাদন, পাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহ ভূমিকা রাখছে ইয়াবা বাজারজাতের পিছনে। সম্প্রতি বছরগুলোতে মাদক পাচারকারী শক্তিশালী চক্র উচ্চ আয় সমৃদ্ধ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে টার্গেট করে ক্রিষ্টাল মেথাম্ফিটামিন ছড়ানোর চরম পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ইয়াবা উৎপাদনের অন্যতম দেশ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সাম্প্রতিক সময়ে মাদক উৎপাদন, পাচারের মতো উঠতি প্রবাহের বিরুদ্ধে রীতিমত সংগ্রাম করছে বলে বিশ্ব মাদকবিরোধী দিবসে জানানো হয়েছে। সোমবার দিনটি উদযাপনের সময় মিয়ানমার ৩৮৫ কোটি পিস ও থাইল্যান্ড ৫৮৯ কোটি পিস্ জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে বলে এএফপি, রয়টার্স সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে। এএফফি’র তথ্যমতে মিয়ানমারে মাদক উৎপাদন ও পাচারের সাথে জড়িত ১৩ হাজার ৫শ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তৎমধ্যে পূর্ববর্তী বছরের তথ্যমতে অন্তত ৫০ ভাগ বৌদ্ধ ধর্মীয় ভিক্ষু ও সেনা কর্মকর্তারা রয়েছে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মাদক পাচারকারী চক্র ক্রমবর্ধমান অবৈধ চাহিদার নিরিখে বিগত কয়েক বছরে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পাচারকারীদের সাথে হাত মিলিয়েছে। এতে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইয়াবা পাচার ও সেবনের দ্রুত আশংকাজনক তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম বলেছেন, ইয়াবা সহ মাদকের ভয়াবহতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবা পাচারকারী ও সেবনকারী সমাজে চিহ্নিত। মানব পাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠায় তা সরকার বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। ইয়াবা পাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক তীব্র প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে উঠলে সরকার জনগণের সহায়তায় তা বন্ধ করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি জানান। গত ২৪ জুন উখিয়ায় এক বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী পরিষদ সচিব ইয়াবা বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের আহ্বান জানান।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর