নিজস্ব প্রতিবেদক:
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (মচিমহা) নতুন ভবনের আইসিইউ ইউনিটে অগ্নিকান্ডে লাইফ সাপোর্ট মেশিনসহ বেশ কিছু মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে। আগুন লাগার পরপরই লাইফ সাপোর্টে থাকা ৬জন রোগিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হলে দুইজনের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার সকাল পৌণে দশটার দিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌণে দশটার দিকে মচিমহা’র নতুন ভবনের আইসিইউ ইউনিটের ভেতরে এসি থেকে ধোঁয়া নির্গত হতে দেখে রোগীর স্বজনরা ডাকচিৎকার শুরু করে এবং দিগি¦দিক ছুটাছুটি করতে থাকতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রচন্ড ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে আইসিইউ ইউনিটের চিকিৎসক, কর্মচারী ও রোগীরা আটকা পড়েন। বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করা হলে দু’টি ইউনিটের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় র্যাব ও পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
আইসিইউ ইউনিটের প্রধান প্রফেসর ডা. ফজলুল হক খান পাঠান জানান, হাসপাতালের নতুন ভবনের পঞ্চম তলায় অবস্থিত ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) স্টোররুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখান থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আইসিইউ ইউনিটের ভেতর আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাইফ সাপোর্টে থাকা ৬ জন রোগিকে উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
তিনি জানান, লাইফ সাপোর্টে থাকা ছয়জন রোগীর মধ্যে তিনজনের অবস্থাই সঙ্কটাপন্ন ছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলে মঙ্গলবার বিকাল চারটার দিকে হেলাল উদ্দিন (৫০) এবং বুধবার ভোরে সুরুজ মিয়া (৪৮) মারা যান। হেলাল জামালপুরের মরহুম ওমর আলীর ছেলে। সুরুজ মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। এখনো একজন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। তাদেরকে সিসিইউতে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডা. পাঠান আরো জানান, আইসিইউ ইউনিটে দশ লাখ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা মূল্যের বেশ কয়েকটি যন্ত্রপাতি রয়েছে। এসব যন্ত্রপাতির ভেতরে পানি জমেছে। যন্ত্রপাতিগুলো ফ্যানের বাতাসে শুকানো হচ্ছে। শুকানোর পর চার্জ দিলে বুঝা যাবে যন্ত্রগুলো সচল আছে কিনা। ইউনিটের ভেতরের অংশটা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে আইসিইউ চালু করা হতে পারে বলে আশা করছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ডা. ফজলুল হক খান পাঠান বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করে বলেন, নতুন ভবন চালু নির্মাণের পর বেশ কিছুদিন অব্যবহৃত ছিল। তখন ভবনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যায়। এখনো নতুন ভবনে পর্যাপ্ত সার্কিট ব্রেকার নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
মচিমহা’র সহকারী পরিচালক ডা. লক্ষী নারায়ণ মজুমদার জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য ইপ-পরিচালক ডা. আব্দুল গণিকে আহবায়ক ও তাকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারি পরিচালক ডা. আবুল কাসেম, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, গণপূর্ত বিভাগের প্রতিনিধি, আইসিইউ’র স্টাফ ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টোর অফিসার। তাদেরকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল দশটায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট প্রদান করবেন। বিদ্যুৎ বিভাগ ও গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা ইতোমর্ধেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান তিনি।
মচিমহা’র উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল গনি জানান, ঘটনার পরপরই স্বান্থ্যমন্ত্রী, মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খোঁজখবর নেন। স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর