২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৩৫

কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে ইলিশা ফেরীঘাটের বেহাল দশা

ভোলা প্রতিনিধি ॥

ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শেষ মুহুর্তে নাড়ির টানে ভোলায় ফিরছে হাজারো মানুষ। উদ্দেশ্য বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই বোনসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আানন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার-হাজার মানুষ ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে এসে থমকে দাড়ায়। কারন ফেরিঘাটের পল্টুন মেঘনা নদীর পানিতে ডুবে গেছে। আর সেই ডুবন্ত পন্টুন দিয়ে শুক্রবার দুপুরে একটি যাত্রীবাহী বাস ফেরিতে ওঠার সময় পন্টুনেই আটকে পড়ে। এতে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরিতে সব ধরনের যানবাহন ওঠা-নামা বন্ধ হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়েন ঈদে ঘরমুখো সাধারণ যাত্রীরা। তাদেরকে ফেরিঘাটে এসে হাটু পরিমান নদীর পানির ভেতর দিয়ে বহু কষ্টে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটের পন্টুন মেরামত না করায় প্রতি বছরই ঈদে ঘরমুখো হাজারো যাত্রী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ইলিশা ফেরিঘাটটি এখন বেহাল দশা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে দিকে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিঘাটের পন্টুন মেঘনার পানিতে ডুবে গেছে। ডুবন্ত পন্টুনের ওঠা-নামার পথে আটকে আছে একটি যাত্রীবাহী বাস। তবে, এ সময় ওই বাসে কোন যাত্রী ছিলনা।
স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ডুবন্ত পন্টুনে ওঠার সময় যাত্রীবাহী বাসটি পন্টুনে আটকে পড়ে। ফলে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ৩টি ফেরি এলেও সব ধরনের যানবাহন ওঠা-নামা বন্ধ হয়ে যায়। তারা ফেরিঘাটে এসে হাটু পরিমান নদীর পানির ভেতর দিয়ে বহু কষ্টে যাতায়াত করছেন। বিকেল ৩টার দিকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর ঘাট থেকে যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাকসহ ১০-১২টি যান নিয়ে ফেরি কনকচাঁপা ইলিশা ফেরিঘাটে এলেও কোন যানবাহন ওঠা-নামা করতে পারছেনা।
ফেরি কনকচাঁপায় চেপে চট্টগ্রাম থেকে ভোলায় আসেন ওয়ার্কশপের দোকানী মোঃ সুমন। ঈদের ছুটি পেয়ে সুমন চট্টগ্রাম থেকে ভোলায় গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে আসেন। ছেলে সুমনকে এগিয়ে নিতে ইলিশা ফেরিঘাটে আসেন বাবা মোস্তফা। ফেরিঘাটের বেহাল অবস্থার কারনে বাব-ছেলে দুজনই ফেরি থেকে নেমে হাটু পরিমান পানির ভেতর দিয়েই ইলিশাঘাটে আসেন। তাদের মত বহু যাত্রী এভাবেই হাটু পরিমান পানির ভেতর দিয়েই ইলিশাঘাটে আসেন।
গাড়ি চালক মন্নানও ফেরি কনকচাঁপা দিয়ে আসেন চট্টগ্রাম থেকে। মন্নান বলেন, ঈদের ছুটিতে ভোলায় এসেছি। কিন্তু ইলিশাঘাটের যে অবস্থা তাতে ঈদ করতে আর গ্রামের বাড়ি আসা সম্ভব না।
ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মালেক এসেছেন লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর ঘাট থেকে। মালেক বলেন, ডুবন্ত পন্টুনের মাঝপথে বাস আটকে পড়ায় আমরা এখন হাটু পরিমান পানির ভেতর দিয়ে অনেক কষ্টে ইলিশাঘাটে এসেছি। তিনি বলেন, ঘাট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে আজ ইলিশা ফেরিঘাটটি বেহাল দশা হয়েছে। এ ফেরিঘাটের দিকে কেউ কোন নজর দিচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরির ব্যবস্থাপক বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা আবু আলম বলেন, জোয়ারের পানিতে পন্টুনের র‌্যাম ডুবে যায়। ডুবন্ত পন্টুন দিয়ে শুক্রবার দুপুরে একটি যাত্রীবাহী বাস ওঠার সময় বাসটি আটকে যায়। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তিনি অবশ্য বলেন, নদীতে ভাটা এলে বাসটি পন্টুনে উঠে যাবে। তখন যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। বিআইডব্লিউটিসির এ কর্মকর্তা বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পন্টুনটি মেরামত না করায় যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ ভোলার ট্রাফিক ইনচার্জ মোঃ নাছিম বলেন, ইলিশা ফেরিঘাটে পন্টুনের গ্যাংওয়ের কাজ চলছে। আশা করা যায় আজ-কালের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
এদিকে ইলিশা ফেরিঘাটের পাশেই বিআইডব্লিউটিএ’র স্থাপিত আরো একটি পন্টুনেরও প্রায় একই অবস্থা। ওই পন্টুনে লঞ্চ ও সিট্রাকের যাত্রী ওঠা-নামা করেন। বিকেলে ওই পন্টুন দিয়ে ওঠা-নামার সময় বেশ কয়েকজন যাত্রী পন্টুন থেকে পড়ে যায়। এ সময় ২-৩ জন যাত্রী আহত হন। পন্টুন ও ঘাটে নির্ধারিত টাকা দিয়ে টিকিট নিলেও যাত্রীরা সেবা পাচ্ছেননা বলে অভিযোগ সাধারণ যাত্রীদের।

দৈনিক দেশজনতা /এমএম

প্রকাশ :জুন ২৫, ২০১৭ ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ