২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৫৩

ঢাবির শিক্ষক নির্বাচন জমে উঠছে

দেশ জনতা ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে শিক্ষক রাজনীতি। এ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বাম সমর্থিত নীল দল এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। ক্ষমতাসীন নীল দলের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে অসন্তোষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে দলটির শিক্ষকরা এ কোন্দলে জড়িয়েছেন। অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করে নিজেদের ব্যক্তিগত প্রভাব প্রদর্শন এবং অবস্থান জানান দিতে মতদ্বন্দ্বে জড়িয়েছে সাদা দল। ফলে উভয় দলেই সাধারণ ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে নিজ দলের শিক্ষকদের পক্ষে ভেড়ানোর অসম প্রতিযোগিতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এর আর্টিক্যাল ২০(১) (এল) অনুযায়ী আগামী ২২ মে ১০৫ সদস্যবিশিষ্ট সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ৮১ শতাংশ প্রতিনিধির পদ শূন্য থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ মে এ নির্বাচনের ঘোষণা আসে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের ঘোষণা দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারছে না। বরং স্বার্থের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি করেছে ভয়াবহ কোন্দল। ফলে নির্বাচনে প্যানেল গঠনকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশাঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে আসীন থাকা বা হওয়া, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত আইনি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ না রাখা, আঞ্চলিকতা, দলের মেয়াদ উত্তীর্ণ আহ্বায়ক কমিটি, শীর্ষ পদধারীদের বিতর্কিত ভূমিকা এবং স্বার্থগত দ্বন্দ্ব থেকেই নীল দলে গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষমতাসীন নীল দলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি উপাচার্যের পক্ষের, অন্যটি তার বিরোধী। বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে ভিন্ন মত থাকলেও বর্তমান উপাচার্যবিরোধী ইস্যুতে জোট বেঁধেছে শিক্ষকদের একটি বড় অংশ। যেহেতু সিনেট সদস্যরাই আগামী দিনে তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করবেন এবং সেখান থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে (উপাচার্য) নিয়োগ প্রদান করা হবে, তাই সেই বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে উভয় পক্ষেই চলছে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা। যেহেতু সিনেটের অধিকাংশ পদ এখনও ফাঁকা, তাই শিক্ষক প্রতিনিধিরাই (৩৫ জন) গতবারের মতো আসন্ন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা রাখবেন বলে তাদের ধারণা। গতবার রেজিস্ট্রার গ্র্যাজুয়েট থেকে সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচিত না করেই ১০৫ সদস্যবিশিষ্ট সিনেটের মাত্র ৪৬ সদস্যের অংশগ্রহণে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হয়েছিল।

গ্রুপিংয়ের সূত্রপাত অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ সালের এপ্রিলে অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীনকে আহ্বায়ক করে এক বছরের জন্য আহ্বায়ক কমিটি করে নীল দল। কিন্তু নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও তারা পদ ছাড়েননি। ফলে বিভিন্ন সময় নীল দলের বৈঠকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাদের। সর্বশেষ ১৮ জানুয়ারি ডিন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলটির সাধারণ সভায় বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ৭ জানুয়ারি নীল দলের সাধারণ সভায় যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলে অন্য শিক্ষকদের তোপের মুখে পড়ে আহ্বায়ক কমিটি। পরে ডিন নির্বাচনে ১০টি অনুষদের ৯টিতেই নীল দল জয়ী হলেও কেবল যুদ্ধাপরাধী পরিবারের ওই শিক্ষকই নির্বাচনে হেরে যান। এতে বেশ বিব্রত হন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।

প্রকাশ :মে ৭, ২০১৭ ২:২৯ অপরাহ্ণ