২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৩৫

মৃতদেহ সংরক্ষণ ও সৎকারের কিছু অদ্ভুত উপায়

ফিচার ডেস্ক:

প্রাচীনকাল থেকে নানা কারণে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মৃতব্যক্তির দেহকে সংরক্ষণ করার প্রচলন যেমন রয়েছে, তেমনি সৎকারেরও নানা পদ্ধতি রয়েছে। মৃতব্যক্তির দেহ সংরক্ষণ ও সৎকারের বিচিত্র সেসব পদ্ধতি নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।

মমি

মৃতদেহ সংরক্ষণ কথাটি শুনলেই হলিউডের ‘দ্য মমি’ ছবিটির কথা মাথায় আসে। এ ছবিতে মমির পুনরুত্থানসহ বিভিন্ন কার্যকলাপ দেখানো হলেও আসলে মমিগুলো এতো ভয়ঙ্কর নয়। তবে আজকের যুগে গবেষণার জন্য বেশ দরকারী এই মমিগুলো। মিসরে হাজার হাজার বছর আগে শরীরের ভেতর থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বিভিন্ন পচনশীল পদার্থ বের করে সেখানে অন্যান্য পদার্থ দিয়ে পূর্ণ করে দেয়া হতো। এরপর সেই দেহটি সাদা কাপড়ে মুড়ে দিয়ে একে রাখা হতো বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত এক বাক্সে। মমি প্রথা তখনকার সময়ে কেবল অভিজাতদের মধ্যেই প্রচলিত ছিল।

আগুনের মমি

প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে পাপুয়া নিউগিনির মধ্যভাগ ও পশ্চিম অংশের পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করা উপজাতিদের মধ্যে ‘দানি’ একটি। তারা তাদের গোত্র প্রধান ও যোদ্ধাদের মৃতদেহ মমি করে সংরক্ষণ করে থাকে। শত শত বছরের পুরনো এই প্রথায় তারা নিজস্ব উদ্ভাবিত কৌশল ব্যবহার করে। শুধু এক ধরনের প্রাণীজ তেল ও অল্প আগুনের আঁচে অনেকদিন ধরে করা হয়ে থাকে এই মমিগুলো।

পেপারওয়েট

আমাদের আশেপাশেই এমন অনেকের দেখা মেলে, যারা কিনা কাজের মাঝেই খুঁজে পান জীবনের প্রকৃত আনন্দ। আর কাজপাগল সেই মানুষগুলোর জন্যই অদ্ভুত এ সৎকার পদ্ধতি। এজন্য দরকার হয় মৃতব্যক্তির দেহের ছাই। একেকটি পেপারওয়েট বানাতে মোটামুটি আধা চা-চামচ পরিমাণ ছাই লাগে। সেই ছাইকে এরপর রঙিন কাঁচের উত্তপ্ত মিশ্রণের সাথে মিশিয়ে হরেক রকম ডিজাইনের পেপারওয়েট তৈরি করা হয়। বাইরে থেকে পেপারওয়েটের ভেতরের সেই ছাই দেখার ব্যবস্থাও রাখা হয়।

টেডি বিয়ার

আমাদের অনেকেরই অত্যন্ত পছন্দের এক নির্জীব সঙ্গী হলো টেডি বিয়ার। ‘হাউ কিউট’, ‘সো সুইট’ হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে প্রায় সময়ই পরিচিতজনদের তাদের টেডি বিয়ারের সাথে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছবি আপলোড করতে দেখা যায়। এসব দেখেই অদ্ভুত এক মৃতদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতির আইডিয়া নিয়ে এসেছে কিছু কোম্পানি। এ লক্ষ্যে তারা প্রথমে মৃতব্যক্তির দেহের ছাই সংগ্রহ করে নেয়। এরপর সেই ছাইকে কোনো একটি পাত্রে রেখে সেই পাত্রটি ঢুকিয়ে দেয়া হয় একটি টেডি বিয়ারের ভেতরে। যাতে করে সেই টেডি বিয়ারকে জড়িয়ে ধরলে একজন ব্যক্তি তার সেই হারানো প্রিয়জনের ছোঁয়া খুঁজে পেয়ে মানসিক তৃপ্তি পান।

ডায়মন্ড

টেডি বিয়ারকে তো আর সারাক্ষণ কোলে করে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় না। তাই কেউ কেউ চিন্তা করলেন এমন কোনো এক পদ্ধতির কথা, যাতে করে চিরবিদায় নেয়া প্রিয়জনকে সবসময় কাছে রাখা যায়। আর সেখান থেকেই এসেছে ডায়মন্ডের ধারণা। এজন্য মৃতব্যক্তির ভস্মকে উচ্চ তাপ ও চাপে ডায়মন্ড ক্রিস্টালে পরিণত করা হয়। সবশেষে সেই ক্রিস্টালকে খদ্দেরের পছন্দের আকারে কাটা হয়। এভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি সারতে কয়েক মাস লেগে যায়। গ্রাহকের চাহিদামতো রঙ ও আকারের ভেদে একেকটি ডায়মন্ডের দাম ২ হাজার থেকে ২৫হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। সেই ডায়মন্ডকে কেউ কেউ আবার তাদের ব্যবহৃত অলঙ্কারেও ব্যবহার করে থাকেন।

রেজোমেশন

রেজোমেশনকে বলা হয়ে থাকে মৃতদেহ সৎকারের আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। এজন্য মৃতদেহকে পানি ও লাই (Lye – ধোয়ামোছায় ব্যবহৃত তরল ক্ষারবিশেষ) এর মিশ্রণের সাথে উচ্চ চাপে প্রায় ৩২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে উত্তপ্ত করা হয় রেজোমেটর (Resomator) নামক মেশিনে। এর ফলে মৃতদেহের সাদা বর্ণের ধুলোর মতো অবশেষ পাওয়া যায়। অপেক্ষাকৃত কম কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ ও শক্তি সাশ্রয়ী পদ্ধতি বলে অনেকেই একে পরিবেশবান্ধব বলে মনে করে থাকেন।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জুন ২৪, ২০১৭ ১:১৬ অপরাহ্ণ