কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে প্রতিনিয়ত নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারনে দেশে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে প্রান হারাচ্ছে অগনিত মানব সন্তান। ধ্বংসের অথই সাগরে নিমজ্জিত হচ্ছে প্রিয় মাতৃভূমির সোনার মাটি ও প্রাকৃতিক অমুল্য সম্পদ।
সম্প্রতি পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্হানে পাহাড় ধসে দুই শতাধিক মানুষ ও অসংখ্য জীব বৈচিত্রের প্রানহানির ঘটনা ঘটে। সচেতন মহল বলেছেন, গত ১৩ জুন চট্টগামের পাহাড়িয়া অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ পাহাড় ধসের প্রধান কারন নির্বিচারে পাহাড় কাটা ও সবুজ বৃক্ষ নিধন। গণহারে বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটার ফলে ঘটে যাওয়া পাহাড় ধস, পরবর্তিতে মুত্যুর মিছিল সকলের হৃদয়ে নাড়া দিলেও টনক নড়াতে পারেনি উখিয়া উপজেলার বন বিভাগ কতৃপক্ষের।
উখিয়ার সর্বত্রই এখন চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটার মহোৎসব, কিছু সংখ্যক পাহাড় খেকো ব্যক্তি এলাকায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে বন বিভাগের অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং, রত্নাপালং, রাজাপালং ও পালংখালী এলাকায় নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনপুর্বক পাহাড় কেটে বিরান ভূমি পরিনত করে চললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব। বিশেষ করে রাজাপালং বন বিটের আওতাধীন পাহাড় গুলোর উপর চলছে চরম দুর্দশা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উক্ত বিটের পাহাড়ীয়া অঞ্চল পিনিজিরকূল, ও তুতুরবিল এলাকার পরিবেশের ভারসম্য রক্ষাকারি বিশাল বিশাল পাহাড় তাতে কালের সাক্ষী প্রাচীন সবুজ বৃক্ষ এখন আর নেই। রাক্ষুসে গাছ খেকো সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হারিয়ে গেছে অসংখ্য প্রজাতি সবুজ বৃক্ষ।
এখন চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা, অভিযোগ উঠেছে রাজাপালং বন বিটের দুর্নীতিবাজ বিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবী, ও হেডম্যান আব্দু শুক্কুর কে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। তুতুরবিল খেলার মাটের দক্ষিণ পার্শ্বে, সাবেক মেম্বার আবুল বাশারের বাড়ির রাস্তার পার্শ্বের বিশাল পাহাড় ৩/৪ টি ডাম্পােরর সাহায্যে প্রতিদিন প্রকাশ্যে দিনদুপুরে মাটি কেটে তা বিভিন্ন স্থানে পাচার করে যাচ্ছে রফিক, শফিক নামক দুই ভাই। তারা চুক্তিভিত্তিক মাটি সরবরাহ করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিনত হওয়ার পাশা-পাশি মাটির বিক্রির একটি অংশ চলে যাচ্ছে এলাকার দায়িত্বরত বিট কর্মকর্তা, হেডম্যান ও প্রভাবশলীদের হাতে।
সূত্রে জানা যায়, সরকার ইতিমধ্যে ঘোষনা করছে ধানী জমিতে কোন ধরনের ভরাট ও বহুতল ভবন নির্মান করা যাবেনা, সরকারের নির্দেশকে উপেক্ষা করে ধানী জমি ভরাট ও আবাস ভূমি তৈরী করে চলা ঐসব জমিতে তুতুরবিল এলাকার বিশাল পাহাড়ের মাটি চলে যাচ্ছে জমি ভরাট করার কাজে যার কারনে উক্ত পাহাড়ের মাটির কদর এখন আকাশচুম্বি। এলাকার অনেক সচেতন ব্যক্তি আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, উখিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলেরর পাহাড় থেকে এভাবে নির্বিচারে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে সম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য এলাকায় ঘটে যাওয়া মাটি ধসের মত ঘটনার ভাগ্য বরন করতে হবে।
এ ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে রাজাপালং বন বিটের কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবী বলেন, তুতুরবিল এলাকার পাহাড় কাটার ব্যাপারে আমার বিট থেকে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিন্তু কিছুতেই পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। এলাকার কিছু প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা মাটি খেকো সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে, যার কারনে আমরা অসহায় অবস্থায় রয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আমরা একাধিকবার তাদের নিষেধ করার পরও থামানো যাচ্ছেনা পাহাড় কাটা। তবে আপনারা যদি আমাদের নাম দেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবো।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ বিট কর্মকর্তা, কর্মচারী ও হেডম্যান মাটি খেকো সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে নিজেরা ধোয়া তুলসী পাতা সেঁজে বসে রয়েছে। এলাকাবাসী আরো বলেন, যারা বিগত ৫/৬ বছর পুর্বে তুতুরবিল এলাকায় এসেছিল তাদের আজ রাস্তা ঘাট খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে, কারন ৫/৬ বছর পুর্বে এলাকায় কালের স্বাক্ষী হিসেবে দাড়িঁয়ে থাকা ছোট বড় পাহাড় আর চোখে পড়বেনা। সরকারি বনভুমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা শতশত বিলাস বহুল বাড়ির মাঝে হারিয়ে গেছে।
পরিবেশবাদী মহলের অভিমত আরেকটি মহা দুর্যোগ সৃষ্টির পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নজর না দিলে আগামীতে পাহাড় ধস, ঘুর্নিঝড়, বন্যা জলোচ্ছাসের মত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে অসংখ্য মানব সন্তান পশু,পাখি সহ বিভিন্ন জীব বৈচিত্র।
দৈনিক দেশজনতা/এমএম