নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার ঐতিহ্য বাঙালির দীর্ঘদিনের। তাই শত বাধা, ভোগান্তি আর বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে প্রতি ঈদেই নাড়ির টানে বাড়ির ফেরে রাজধানীবাসী। প্রতিবছরই তাই ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে কমলাপুরে সৃষ্টি হয় মানুষের স্রোত।
সেই ধারাবাহিকতায় আজ ৮ আগস্ট বুধবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুরে শুরু হয়েছে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। আজ দেয়া হচ্ছে ১৭ আগস্টের টিকিট। এই দিনের টিকিট পেতে কমলাপুরে সকাল থেকেই রয়েছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ২৬টি কাউন্টার থেকে এই টিকিট দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে থেকে টিকিট প্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ লাইন একে বেকে চলে গেছে স্টেশনের বাইরের দিকে।
সব মিলিয়ে অন্যান্য বারের মতো ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের জন্য আসা মানুষের ভিড়ের চিরচেনা রূপে ফিরেছে কমলাপুর রেলস্টেশন। কাউন্টারের সামনে শুধু টিকিট প্রত্যাশী মানুষ আর মানুষ।
প্রতিবারের মতো এবারও দশ দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। আগামীকাল ৯ আগস্ট বিক্রি হবে ১৮ আগস্টের টিকিট। এভাবে ১০, ১১ ও ১২ আগস্ট পর্যায়ক্রমে মিলবে ১৯, ২০ এবং ২১ আগস্টের টিকিট। এই দিনগুলোতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কমলাপুর স্টেশনে ২৬টি কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ২টি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত আছে।
টিকিটের লাইনে গত রাত ১১টার দিকে এসে দাঁড়িয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ অভি। আগামী ১৭ আগস্টের রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটবেন তিনি।
সাব্বির বলেন, রাত থেকেই টিকিট প্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ লাইন। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে কাউন্টারে ধীর গতি। আমার সিরিয়াল আসা পর্যন্ত এসি টিকিট পাব কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।
লাইনের সামনের দিকে ছিলেন উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট প্রত্যাশী জুলফিকার আহমেদ। তিনি বলেন, মূলত এসি টিকিটের জন্যই গত রাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। তবে এখনই শুনছি এসি টিকিট শেষ। স্ত্রী সন্তানসহ ঈদ করতে বাড়িতে যাব। শত ভোগান্তি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যদি টিকিট না পাই তাহলে এত কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে কী লাভ?
এদিকে ট্রেনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ট্রেনর অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে। আমদের সম্পদ সীমিত। এই সীমিত সম্পদের মধ্যেই আমরা চেষ্টা করছি। সকাল থেকেই সবাই সুশৃংখলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন।
জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও মোট টিকিটের ৬৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশের ২৫ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। ৫ শতাংশ ভিআইপি ছাড়াও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
ঈদযাত্রায় ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন
এবারের ঈদযাত্রায় ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে বলে জানা গেছে। এগুলো হলো-
দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল : ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ- ঢাকা (ঈদের আগে ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট চার দিন এবং পরে ২৩ আগস্ট থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ৭ দিন চলবে)।
চাঁদপুর স্পেশাল ১ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম (ঈদের আগে ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট চারদিন এবং ঈদের পরে ২৪ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৭ দিন চলবে)।
চাঁদপুর স্পেশাল ২ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম (ঈদের আগে ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট চারদিন এবং ঈদের পরে ২৪ আগস্ট হতে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৭ দিন চলবে)।
রাজশাহী স্পেশাল : রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী (ঈদের আগে ১৮, ১৯ ও ২০ আগস্ট তিনদিন এবং ঈদের পরে ২৪ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৭ দিন চলাচল করবে)।
দিনাজপুর স্পেশাল : দিনাজপুর-ঢাকা-দিনাজপুর (ঈদের আগে ১৮, ১৯ ও ২০ আগস্ট তিন দিন এবং ঈদের পরে ২৪ আগস্ট থেকে ৭ দিন পর্যন্ত চলাচল করবে)।
লালমনি স্পেশাল : ঢাকা-লালমনিরহাট-ঢাকা (ঈদের আগে ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট চারদিন এবং ঈদের পরে ২৪ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট ৭ দিন চলবে)।
খুলনা এক্সপ্রেস : খুলনা-ঢাকা-খুলনা (ঈদের আগে ২১ আগস্ট একদিন চলবে)।
শোলাকিয়া স্পেশাল-১ : ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে ঈদের দিন চলাচল করবে।
শোলাকিয়া স্পেশাল-২ : ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ঈদের দিন চলবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনায় সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হবে। ২১, ২২ আগস্ট মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং ২৩ আগস্ট বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।
একজন যাত্রীকে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট দেয়া হবে এবং বিক্রিত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহার ৫ দিন আগে ১৮ আগস্ট থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে।