নিজস্ব প্রতিবেদক:
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে তিনদিনের আলটিমেটাম দিয়েছে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে। এ সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করা না হলে আগামী শনিবার রাজধানীসহ সারাদেশে বিএফইউজের আহবানে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হবে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল। ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্যের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে নেতারা বলেন, যেখানে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে, সেখানে তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাহলে আপনাদের কাজ কী? নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামা আন্দোলনরত কোমলমতিদের সামাল দিতে পেরেছেন, সাংবাদিকদের সামাল দিতে পারবেন না। তারা আরও বলেন, দায়িত্ব পালনকালে রাজধানীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা যে দলেরই হোক না কেন অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে সাংবাদিক সমাজ সারাদেশে একযোগে দুর্বৃত্ত ও তাদের সহযোগিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর যারা হামলা করে, তারা গুজবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমাদের পেশাদারিত্বের জায়গা যারা বাধাগ্রস্থ করতে চায়, তারা সাংবাদিকদের শত্রু। দুঃখজনক হলেও সত্য হামলার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ধরতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি সরকারের পক্ষের কেউ আহতদের হাসপাতালে দেখতে যায়নি। সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার করতে না পারলে আপনারাও আমাদের সমালোচনার পাত্র হবেন।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের দেশের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে এই কোমলমতি বাচ্চারা রাস্তায় নেমেছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের এই কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন। তারা দেখিয়েছে কীভাবে চলতে পারে দেশ। কিন্তু এই আন্দোলনে ঢুকে পড়া এই তৃতীয় পক্ষ কারা? এই সরকার গণমাধ্যমবান্ধব, তাহলে সেখানে এরকম ঘটনা কেন ঘটছে?’
বিএফইউজে’র সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, ‘আমরা ঢাকাসহ সারা দেশে আগামী ১১ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবো। আমার ভাইকে রাস্তায় পেটানো হবে আর আপনারা নিরাপদে থাকবেন, তা হবে না। আমি সর্বস্তরের সাংবাদিকদের এই কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানাই।’
বিএফইউজে’র মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগে, প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি থানায় আন্দোলন দেখতে চাই। গুজব রটনাকারীরা আমাদের বিভ্রান্ত করছে। গুজবে কান দেবেন না। সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ কঠোর আন্দোলন করবো আমরা।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, সাংবাদিকরা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করেন। গণতন্ত্র ও সমাজ বিকাশে বর্তমান সরকারের আদর্শ ও পদক্ষেপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সাংবাদিক সমাজ তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াত আমলের মতো সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না। এ সময় ডিইউজের সভাপতি সাংবাদিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে আহত সাংবাদিকদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য তথ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টাকে আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার পরে কয়েকদিন চলে গেলেও আহত সাংবাদিকদের কোন খোঁজখবর নেননি। এটা দুঃখজনক। আমরা দল কানা নই, আমাদের চোখ আছে। তিনদিনের মধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত না করলে, আর বিচারের আওতায় না আনলে আমাদের পথ আমরা বেছে নেবো।’
ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল, তখন তাদের অভিভাবকরা, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা, প্রিন্সিপালরা কোথায় ছিলেন? এই আন্দোলনে কীভাবে অছাত্ররা প্রবেশ করলো? বারবার সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনও ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীরা যুক্ত থাকেন। নিরাপদ সড়কের ন্যায্য আন্দোলনে দেখা গেছে- তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে। তারা সাংবাদিকদের বেছে বেছে হামলা করছে। সরকার, প্রশাসন ভালো করেই জানে এদের চিহ্নিত করা কোনও কঠিন কাজ নয়।’
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ, সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন, বিএফইউজের দপ্তর সম্পাদক বরুন ভৌমিক নয়ন, নির্বাহী সদস্য শেখ মামুনুর রশিদ, ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজল হাজরা, দৈনিক ইনসানিয়াতের ইউনিট চিফ খোরশেদ আলম, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ইউনিট চিফ মতলু মলিক, দৈনিক জনতার ইউনিট চিফ আতাউর রহমান রুবেল, সিনিয়র সাংবাদিক বাচসাস নেতা ফরিদ বাশার প্রমুখ।
এ সময় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের সাবেক সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মিঞা, ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী শুভ, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব আবদুল মজিদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য খায়রুজ্জামান কামাল, নূরে-এ জান্নাত আক্তার সীমা, ডিইউজের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জি এম মাসুদ ঢালী, জনকল্যাণ সম্পাদক ফারহানা মিলি, নির্বাহী সদস্য সলিমুল্লাহ সেলিম, ইব্রাহিম খোকন, অজিত কুমার মহলদার ও রিমন মাহফুজ। ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত রানা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মাইনুল আলম, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহে আলম জেমস, বাবিসাস সভাপতি আবুল হোসেন মজুমদার, ডিইউজের সাবেক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান খান বাবু, দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের ইউনিট চিফ এহসান পারভেজ তুহিন, দৈনিক ডেসটিনির ইউনিট চিফ আনিছুর রহমান, দৈনিক জনকণ্ঠের ডেপুটি ইউনিট চিফ পলাশ চন্দ্র দাশ, দৈনিক জনতার ডেপুটি ইউনিট চিফ জাহাঙ্গীর খান বাবু প্রমুখ।