২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:০১

হঠাৎ হতোম্মি আর হত্যা

শিল্পসাহিত্য ডেস্ক:

সংস্কৃত ‘হঠাৎ’ শব্দের মূল অর্থ ‘যা হঠকারিতার সাথে করা হয়’। অর্থাৎ হঠাৎ শব্দের মূল সম্পর্ক হঠকারিতার সঙ্গে, সময় বা আকস্মিকতার সঙ্গে নয়। অথচ বাংলায় হঠাৎ বলতে এখন আকস্মিকভাবে সংঘটিত বোঝায় (কিন্তু দেহ দীর্ণ আত্মা তলিয়ে হঠাৎ মিলায় অন্ধকারে; কাঁটার সাঁজোয়া খেয়ালে হঠাৎ সজার হইল ছুঁচা- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত; হঠাৎ নিরীহ মাটিতে কখন জন্ম নিয়েছে সচেতন তার ধান- দুর্মর, সুকান্ত ভট্টাচার্য; কারফাতে সরফর্দাতে হঠাৎ তোমার কাঁপলো গলা খাঁচার পাখি গর্বাতে- কাজী নজরুল ইসলাম; মাছগুলিও হঠাৎ সন্তুষ্ট হইয়া সরিয়া পড়িয়াছে- শামসুদ্দীন আবুল কালাম; শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে, একটা কি সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে, মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।

হঠাৎ ক্রিয়া-বিশেষণ। সংস্কৃত হঠ্ শব্দের পঞ্চমীর একবচনে হঠাৎ হয়। ‘হঠাৎকার’ মানে জবরদস্তি, হঠকারিতা, গোঁয়ারতুমি।

এদিকে সংস্কৃত হতঃ + অস্মি= হতোস্মি। এটা ক্রিয়া পদ। এটার অর্থ ‘আমি মারা গেলাম’। হা হতোস্মি করা মানে ‘নিরাশ হয়ে মারা গেলাম বলে’ উদ্বেগ প্রকাশ করা (এমন সময় বুকের মধ্যে হৃৎপিন্ডটা যেন হঠাৎ আছাড় খাইয়া হা হতোস্মি করিয়া পড়িয়া গেল- জীবনস্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।

আর সংস্কৃত (হন + ক্যপ + আ= হত্যা। সংস্কৃতে হত্যা মানে প্রাণনাশ, বধ (হত্যা যদি পাপ হয় তো সকল হত্যাই সমান- রাজর্ষি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; মেক্সিকোবাসী পিতামাতারা তেজকাট্লিপোকা ঠাকুরের সম্মুখে তাহাদের শ্রেষ্ঠ কন্যাটিকে হত্যা করিয়া পুণ্য অর্জন করিতে লেশমাত্র দ্বিধা করিত না- নারীর মূল্য, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)।

হত্যা শব্দটির বাংলা অর্থও আছে। কিন্তু হত্যার বাংলা অর্থটি এখন চোখে পড়ে না। বাংলায় হত্যা মানে অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য আমৃত্যু দেবতার নিকট ধর্না দেয়া (অনিল বাবু মন্দিরে হত্যা দিয়ে পড়ে আছেন; তারেকেশ্বরে হত্যে দিতে লোক গ্যালো- হুতোম প্যাঁচার নকশা, কালীপ্রসন্ন সিংহ)।

কাজী নজরুল ইসলাম একই বাক্যে ‘হত্যা’ শব্দটি দুই অর্থে ব্যবহার করেছেন (হত্যা দিয়ে রইলি পড়ে শত্রু হাতে হত্যা-ভয়ে, করবি কি তুই ঠুঁটো ঠাকুর জগন্নাথের আশিস লয়ে)।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মে ১৩, ২০১৮ ৬:৩৭ অপরাহ্ণ