স্বাস্থ্য ডেস্ক:
প্রতিটি শিশুর জন্যই মাতৃদুগ্ধ অপরিহার্য। তবে উন্নত দেশগুলোতে বর্তমানে শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে মায়ের মধ্যেই কিছু কিছু অনীহা দেখা যায়। তার অন্যতম কারণ, ওইসব মায়েরা তাদের ফিগার অটুট রাখতে চান। তাই তারা তাদের সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমান বুকের দুধ পান করান না। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নারীরা তাদের কোলের সন্তানকে বেশি সময় ধরে দুধ পান করাতে পারেন।
বাংলাদেশে কোনও শিশু জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে বুকের দুধ পান করানো হয়। তবে এ হার মাত্র ৫১ শতাংশ। আর ৬ মাসের কম বয়সী ৫৫ শতাংশ শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করানো হয়। ফলে বাংলাদেশের শিশুদের বুকের দুধ পান করার হার বিশ্বের অন্যান্য যেকোনও দেশের চেয়ে বেশি ও দীর্ঘ।
রবিবার (১৩ মে) প্রকাশিত ইউনিসেফের নতুন এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যে কোনও দেশে এই ৯৪-৯৭ শতাংশ অনুপাতে শিশুকে বুকের দুধ দেয়া হয়। যেখানে আফগানিস্তানে ৯৮%, ভুটান ৯৯%, নেপাল ৯৯% ও শ্রীলংকায় ৯৯% শিশুকে বুকের দুধ পান করানো হয়।
ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার ধনী পরিবারের শিশুরা দীর্ঘ সময় ধরে মায়ের বুকের দুধ পায় না। যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র পরিবারগুলোতে ২০-২৩ মাস বয়সী ৮১ শতাংশ শিশুকে বুকের দুধ দেয়া হয়। ধনী পরিবারগুলোতে এ হার মাত্র ৫৭%।
এই প্রবণতায় বিশ্বব্যাপী ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন শিশুকে বুকের দুধ পান করানো হয় না। আর তাতে তুলনামূলকভাবে ধনী দেশগুলোর শিশুরাই মাতৃদুগ্ধ থেকে বেশি বঞ্চিত হয়।
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক জ্যঁ গফ বলেন, ‘একজন মা তার সন্তানকে ও নিজেকে সর্বোত্তম যে উপহার দিতে পারেন তা হচ্ছে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। মা দিবস উদযাপনকে সামনে রেখে আমাদের অবশ্যই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো ও তা চালিয়ে যেতে মায়েদের সমর্থন দিতে হবে।’
দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলগুলোতে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো প্রায় সর্বজনীন হলেও এই চর্চা আরও উন্নতির জন্য পরামর্শের পাশাপাশি নানা সহায়তাও দিচ্ছে ইউনিসেফ।
এদিকে বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে রবিবার বিশ্বের ১২৮টির বেশি দেশে বৈশ্বিক ‘এভরি চাইলন্ড এলাইভ’ প্রচারাভিযান চলছে। যেখানে মা ও শিশু, তাদের গর্ভধারণ, প্রসব ও জন্মদানে সহায়তাপ্রাপ্তির বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বুকের দুধ শিশুদের জীবন বাঁচায় ও তাদের প্রাণঘাতী রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করে। শিশুদের দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়া উচিত। কারণ এটা শিশুর সুস্থ বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উৎস। শিশুর জীবনের দ্বিতীয় বছরে মৃত্যুর হার অর্ধেক প্রতিরোধ করতে পারে বুকের দুধ। এটা শিশুর বুদ্ধির বিকাশে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। শিশুকে দীর্ঘ সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; একজন মা যদি একবছর তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে তার স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৬ শতাংশ কমে যায়। খবর: ইউনিসেফ বাংলাদেশ
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ