শিল্প ও বাণিজ্য ডেস্ক :
দেশে বর্তমানে বিনিয়োগ এক রকম বন্ধ হয়ে আছে বলে মনে করছেন দেশের অন্যতম শিল্পোদ্যোক্তা ও ঢাকা চেম্বারের (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাশেম খান। বিনিয়োগ বাড়াতে বর্তমান কর কাঠামোর আমুল পরিবর্তন – বিশেষত কর্পোরেট করহার ধীরে ধীরে বড় আকারে কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ না দিতে পারলে দেশের টাকা দেশে থাকবে না। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এতে সভাপতিত্ব করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন। এ লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদে কর নীতিমালা বিনিয়োগবান্ধব করার উপর জোর দেন। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান কোম্পানির করহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার দাবি জানান। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহার ৩৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর এটি ৩০ শতাংশ করা এবং পরবর্তী দুই অর্থবছর নাগাদ এটি ২৫ শতাংশ নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেন তিনি। অর্থাত্ বর্তমানে যে হারে কর্পোরেট কর রয়েছে, আগামী তিন বছর নাগাদ তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যানও কর্পোরেট করহার কমানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কর্পোরেট কর কমানোর বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে। তবে এবার কমানো যাবে কিনা, জানিনা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি কমিয়ে আনার চিন্তা রয়েছে।
গতকাল ডিসিসিআই ছাড়াও বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (বিসিআই) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বীমা কোম্পানি ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় মিলিত হয় এনবিআর।
কর্পোরেট করহার ছাড়াও ব্যক্তি করদাতাদের বিদ্যমান করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছে ডিসিসিআই। এছাড়া করদাতাদের বিদ্যমান সারচার্জ (করের উপর কর বা মাশুল) শিথিল করা, কর্পোরেট লভ্যাংশের আয়ের উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা, কোম্পানির করযোগ্য আয়ের ৫ শতাংশ পর্যন্ত গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগকে করমুক্ত ঘোষণা দেওয়া, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর রেয়াত অন্তত দ্বিগুণ করা, ব্যক্তি করদাতাদের উত্সাহিত করতে শিক্ষা ভাতা, বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী পেশাজীবীরা দেশে ফেরার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত কর অব্যাহতি, ট্যাক্স কার্ডধারীদের শিক্ষা, চিকিত্সা, পরিবহনসহ সরকারি সেবায় অগ্রাধিকার দেওয়া, করপ্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে পাইলটভিত্তিতে জরিপ চালানোসহ বেশকিছু আইনগত পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়া আয়কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো, ভ্যাট প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, টার্নওভার করের সীমা বাড়িয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
শেয়ার লেনদেনের উপর কর কমানোর প্রস্তাব ডিএসই’র
বর্তমানে শেয়ার লেনদেনের উপর শুন্য দশমিক শুন্য পাঁচ শতাংশ বা ১শ’ টাকার শেয়ার লেনদনে পাঁচ পয়সা করে উেস কর দিতে হচ্ছে লেনদেনকারীকে। এটি কমিয়ে দেড় পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশে বর্তমান করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর ডিমিউচুয়ালাইজেশন (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক করা) পরবর্তী তৃতীয় বছরের লভ্যাংশেও শতভাগ কর অব্যাহতি চেয়েছে। শুরুতে এটি প্রথম বছর শতভাগ কর অব্যাহতি থাকলে পাঁচ বছরের মধ্যে ধাপে ধারে অব্যাহতি শেষ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে প্রথম বছর শেষে দ্বিতীয় বছরও শতভাগ কর অব্যাহতি পেয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ। ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। বীমা কোম্পানির এজেন্ট কমিশনে অগ্রিম আয়কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দেওয়া ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে
শিল্প প্রতিরক্ষণে নীতিমালা দাবি বিসিআই’র
শিল্প খাত সংরক্ষণের অংশ হিসেবে যে সব পণ্যে অগ্রিম আয়কর, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বহাল রয়েছে, তা আরো বাড়ানো এবং যে সব নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ হয়নি, তাতে ১০ শতাংশ হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিদ্যমান শর্ত প্রত্যাহার করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। বর্তমানে নির্দিষ্ট সংখ্যক পণ্যের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত শুল্ক সুবিধা রয়েছে। এটি অবাধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আগে পদ্ধতিগত সংস্কার, টার্নওভার কর বিদ্যমান ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা এবং এই কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি’র (বিসিআই) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। এসময় বিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মহব্বত উল্লাহ ছাড়াও বিসিআই’র উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ