বিনোদন ডেস্ক:
পারভীন ববি নামটি শুনলেই সত্তর-আশির দশকে পুরুষদের দেহে জেগে উঠত আলাদা শিহরণ। সুন্দর চেহারার সঙ্গে ছিল অসাধারণ স্মার্টনেসে ভরা এক শারীরিক গঠন। তার উপর পোশাক-পরিচ্ছদ চলা ফেরায় তিনি ছিলেন ‘সাহসী’। তখনকার আইটেম গানে ছিল নিয়মিত উপস্থিতি। সেকারণে তার ‘সেক্স অ্যাপিলের’ খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছিল ভক্তমহলে। এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশ করেছে ভারতের কলকাতা২৪ পত্রিকা। তবে সিনেমার চেয়েও ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনার জন্য বেশি আলোচনা হত তাকে নিয়ে। গসিপ ছিল পরিচালক মহেশ ভাটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ককে ঘিরে। পারভীন ববি আবার একসময় আতংকে দিন কাটাতেন তারই সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা নায়ক অমিতাভ বচ্চনের হাতে খুন হয়ে যাবেন বলে।
৮০ দশকে রুপালি পর্দার জগতে তখন তার রমরমা অবস্থা । অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে করেছেন ‘দিওয়ার’, ‘মজবুর’, অমর-আকবর-অ্যান্টনি’সহ একগুচ্ছ জনপ্রিয় ছবি। তবে আলোচনায় ছিলেন অন্য কারণে। মহেশ ভাটের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলিউড পাড়ার মুখরোচক গল্প। হঠাৎ পারভীন ববি একদিন উধাও হয়ে গেলেন বলিউড থেকে। ফিরে আসেন প্রায় ৬ বছর পর । কিন্তু এসেই অদ্ভূত এক আচরণ লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে। তখনই তিনি অভিযোগ এনেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের বিরুদ্ধে। পারভীনের আতংক তাকে নাকি মেরে ফেলার ছক কষেছেন বিগবি অমিতাভ তাই যে কোনও দিনই তিনি মার্ডার হয়ে যেতে পারেন। আসলে তখন এই জনপ্রিয় নায়িকা মানসিক রোগে ভুগতে শুরু করেছেন।
মহেশ ভাটের স্মৃতিচারণা উঠে এসেছিল পারভীন ববি মানসিক রোগে কতটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। মহেশ বিবাহিত হলেও একসময় তিনি এবং পারভীন উভয়ই একে অপরের প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের সম্পর্কই পরবর্তী সময়ে কাল হয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই তাদের দীর্ঘদিনের প্রেমের বিচ্ছেদ ঘটে এবং সে বিষয়টিই ঠিক মানতে পারেননি এই অভিনেত্রী। ফলাফল সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। সুস্থ হতে ১৯৮৩ সালে পাড়ি দিয়েছিলেন নিউইয়র্কে। প্রায় ছয় বছর পরে ফিরে এলেও তিনি স্বাভাবিক আর হতে পারেননি।
এরপর এক রাতে মহেশ এবং পারভীন ফের খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন লাভ মেকিংয়ের ঠিক আগে পারভিন নাকি তাকে জানিয়েছিলেন, মহেশ যেন তাকে অথবা ইউজি কোনও একজনকে বেছে নেয়। ইউজি হল মহেশ ভাটের দার্শনিক বন্ধু ইউজি কৃষ্ণমূর্তি। পারভীন তত দিনে জেনেটিক বায়োকেমিক্যাল ডিজঅর্ডার- প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ার শিকার হয়ে গিয়েছেন। প্রচণ্ড সন্দেহবাতিক হয়ে গিয়েছেন। সারাক্ষণ ভেবে চলেছেন চারপাশে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে।
সেই সময় ওই রাতে পারভীন মহেশকে জানিয়েছিলেন, ইউজি আর তার মধ্যে একজনকে বেছে নিতে, যা শুনে মহেশ আর সহ্য করতে পারেননি। সঙ্গমের ঠিক আগের মুহূর্তেই ফের জামা কাপড় পরে বেরিয়ে যান ঘর থেকে। আর তখন ওই অবস্থায় মহেশের পিছন পিছন তাকে ডাকতে রাস্তায় পারভীনও বেরিয়ে এসেছিলেন একেবারে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়। বেশ কিছুক্ষণ ‘মহেশ, মহেশ’ বলে চিৎকার করতে করতে পারভীন হেটে যান।
মহেশ এমন রেগে ছিলেন যে তিনিও পারভীনকে থামতে বলেননি, এভাবে রাস্তায় বেরোনো উচিত নয় তাও বলেন নি। তবে সেই রাতে দুজনের সম্পর্কে ইতি টেনে দেন। যদিও এর বেশ কিছুদিন পর ২০০৫ সালে ২০ জানুয়ারি নিজের ফ্ল্যাটে পারভীনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে পারভীনে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর মহেশই এগিয়ে এসেছিলেন তাকে দাহ করার জন্য। কারণ মহেশ অনুভব করেছিলেন সাফল্যের চরম শিখরে থেকেও পারভীন ছিলেন কতটা একা।
দৈনকদেশজনতা/ আই সি