২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৪৬

গরমের ফ্যাশন : হালকা সুতিতেই আরাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জৈষ্ঠ্যের এই কাঠফাটা রোদ, লো হাওয়া, তীব্র গরমেও ফ্যাশনের যেন শেষ নেই এই দেশে। আমা-কাঁঠাল পাকা গ্রীষ্মে এখন চলছে পিচ গলা জ্যেষ্ঠ এর পরই আসছে তাল পাকা ভাদ্র। গরমে নিত্যদিনের ফ্যাশন করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হয়। কোন কাপড়ে পাওয়া যায় একটু আরাম। সহজ উত্তর- হালকা সুতি। গরম আর সুতি- এই দুটি শব্দের সম্পর্ক সম্ভবত আমাদের চেয়ে ভালো বোঝে না কেউ। এই সময় যেন সুতির ওপর বিশ্ব ফ্যাশনের প্যাস্টেল শেডগুলো বা হালকা রংগুলো মানানসই হয়ে ওঠে।
সাধারণ রঙের একটু হালকা বা ফিকে, কোমল রঙগুলোকেই ডাকা হয় প্যাস্টেল শেড বলে। ফিকে হলুদ, উজ্জ্বল হলুদ, ঘিয়া, হালকা সোনালি, কখনো বাসন্তী, জলপাই সবুজ, পেস্ট, বেবি পিংক, বাঙ্গি, আকাশি নীল, বেবি ব্লু, সমুদ্রের নীল, লাইট চকলেট এবং ঘুরেফিরে সাদা। গরমে নরম বুননে এই ফ্যাকাশে রংগুলোই এত স্নিগ্ধ এবং কোমল হয়ে ওঠে যে গরমের ফ্যাশন হিসেবে প্যাস্টেল শেড পেয়ে গেছে বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি।
আমাদের দেশে অবশ্য অনেক আগে থেকেই এই রংগুলো ছিল। আমরা ডাকতাম হালকা রং বা অফ কালার বলে। চিরচেনা ব্লক, বাটিক, টাইডাই কিংবা শিবুরির কাজ এই রংগুলোকে ঘিরেই তো শুরু হয়েছিল এককালে। এখনো টাইডাইয়ের কাপড়ে এই রংগুলো মুখ্য।
বিবিআনার প্রধান ডিজাইনার লিপি খন্দকার বললেন, রংগুলো দেখতে চোখে আরাম লাগে, কাপড়টাও কোমল হওয়া উচিত। সুতির আঁটসাঁট জামার চল উঠে গেছে অনেক আগেই। এখন সুতির ঢিলেঢালা প্যাটার্নই জনপ্রিয়। কামিজ জনপ্রিয়, ঝালর দেওয়া স্কার্টও মন্দ লাগে না। তাতে হালকা সুতির কাজ থাকছে, ব্লক থাকছে, স্ক্রিন প্রিন্ট থাকছে। ভারী কাজ না থাকাই ভালো। ওতে গরমের হাঁসফাঁস ভাব আরও বেড়ে যায়।
একটু ফ্রক ও ম্যাক্সি ধাঁচের কামিজে ফ্রিলের কাজ অনেক বেড়েছে এখন- জানালেন নিপুণের প্রধান ডিজাইনার ফয়সাল মাহমুদ। বললেন, তাতে পার্সিয়ান ধাঁচের মোটিফ থাকছে, গয়না, ফুল, লতাপাতার মোটিফ থাকছে। নরসিংদী ও টাঙ্গাইলের তাঁতেও এই রং ভালো ফুটছে। দাওয়াতের জন্য জয় সিল্ক, অ্যান্ডি, লিলেন ও কিছু পেশোয়ারি বুনন তো আছেই। সুতির কাপড়ের ওপর বিভিন্ন ধরনের লেসের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
গরমে সুতির শাড়ির কথা বললে এক পাড়ের কিংবা একাধিক লাইন টানা রঙিন পাড়ের কথা অবধারিতভাবেই চলে আসে। অনলাইনে দেখা গেল, প্রায় সব ফ্যাশন ব্র্যান্ডই গরমের জন্য এমন কাজের শাড়ি রেখেছে সম্ভারে। দেশালের মতো ব্র্যান্ড প্যাস্টেলের জমিনে কন্ট্রাস্ট করেছে গাঢ় রঙে। পাড়টা চিকনই থাকছে। কিছু শাড়ির জমিনে রয়ে গেছে স্ক্রিন প্রিন্টের পরশ। জলপাই সবুজে কালো পাড়, নীলের সঙ্গে হলুদ, খয়েরিতে সবুজ, কখনো হলুদের সঙ্গে গোলাপি।
ডিজাইনার ইসরাত জাহান বলেন, দেশালে আমরা মূলত রঙের খেলা খেলি পোশাকে। এই বছর গরমের পোশাকে থাকছে হালকা রংগুলোর কাজ। কেননা গরমে চড়া রং দেখলে চোখে আরাম লাগে না। আবার একদম সাদাও বেমানান। তাই নরম গোলাপি বা কচি কলাপাতার মতো রঙে সাদার কাজ দিয়ে পোশাকে মিষ্টতা নিয়ে আসা হয়েছে। দেশাল শুরু থেকেই চেষ্টা করেছে সবচেয়ে কম রঙে, কম কাজে শাড়ি ফুটিয়ে তুলতে। যেখানে রংটাই প্রাধান্য পেয়েছে, কাজ নয়।
হালকা রং, তাই এর সঙ্গে রঙিন গয়না ভারি চমৎকার দেখায়। গলায় অনেকগুলো লহর তোলা রঙিন পুঁতির মালা, হাতে একটা ব্রেসলেট বা চুলে গোঁজা দুটা কুড়িয়ে পাওয়া ফুল। শাড়ির সঙ্গে কাজল আর কপালে রঙিন একটা টিপ, ব্যস। বিরক্তিকর ঘাম গরমের সময় তো, মন হালকা রাখতে প্যাস্টেলের কোমল শেডগুলো পরখ করে দেখতে পারেন এবার। গরমের ফ্যাশনকে আলাদা করার আরেকটা বড় কারণ- রং আর কাপড়ের নরমে মনটা যদি একটু ফুরফুরে হয়।

দৈনিক দেশজনতা/এমএইচ

প্রকাশ :মে ২২, ২০১৭ ৪:১৪ অপরাহ্ণ