২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৪৯

খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাবার পথে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়া সড়ক পথে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রওয়ানা করেন। দেড় শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এই বহর এগিয়ে যাবার সময় বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এবং চান্দিনা, ফেণী, নোয়াখালির সেনবাগ, এলাকায় বহরে বাধা দেয়া এবং হামলার ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে বহরে বাধার সৃষ্টি করা হয়। এসবের মধ্যে বড় হামলার ঘটনাটি ঘটে বেগম খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেণীতে। খবরে বলা হয়েছে, বেগম জিয়ার বহর ফেণী শহরে প্রবেশের সময় মোহাম্মদ আলী বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। তাদের হামলায় সাংবাদিক এবং বিএনপি নেতাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং সাংবাদিক বহনকারী অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করেছে।
ঘটনা যে অত্যন্ত নিন্দনীয় সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিএনপি এ হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লগিকে দায়ি করেছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত (২৯, অক্টোবর) এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য-মন্তব্য করা হয়নি। তবে, পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার বিবরণ এবং টিভি চ্যানেলের খবরে প্রচারিত ফুটেজ দেখে এটা বুঝতে বোধকরি কারো বাকি নেই যে, এ নিন্দনীয় ঘটনা ক্ষমতাসীনরাই ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একটি অরাজনৈতিক এবং মানবিক কর্মসূচিতে কেন এ বাধা দেয়া হলো?
বেগম খালেদা জিয়া কক্সবাজার যাচ্ছিলেন মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় গ্রহণ করা অসহায় রোহিঙ্গাদের সচক্ষে দেখতে এবং তাদেরকে ত্রাণ সহায়তা দিতে। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজার দরকার নেই। বিএনপি এদেশের বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দলের একটি। রাজনীতির বাইরেও এ দলটির কাছে মানুষ আরো কিছু আশা করে। শুধু বিএনপি নয়, সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই মানুষ রাজনীতির বাইরে সমাজ ও মানব সেবামূলক কর্মকান্ড আশা করে। তাছাড়া দেশ ও জাতির সমস্যা-সঙ্কটে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালনের দায়িত্বও তাদের রয়েছে। বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়া সে দায়িত্ব পালনের জন্যই কক্সবাজার যাচ্ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। অথচ তাদেরকে সে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া হলো। শুধু এবারই নয়, আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গত আগস্ট মাসে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব সেখানে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগের কর্মীক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছিলেন। এর আগে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, ১৯৯৮ সালের ৯ জুন বেগম জিয়ার নেতৃত্বে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অভিমুখে লং মার্চেও বাধা দেয়া হয়েছিল।
বলা নিষ্প্রয়োজন, এ ধরনের কর্মকান্ড ভালো দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেনা। এসব ঘটনা যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে যে হামলা চালানো হয়েছে, তার দায় ক্ষমতাসীন দল তথা সরকারের ওপরই বর্তায়। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো সরকার বা সরকারী দল দেশের অন্য আরেকটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের গাড়ি বহরে হামলা চালাতে পারে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। অথচ, সে অবিশ্বাস্য কাজগুলোই করে চলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা মাঝে মাঝে এসব ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে বোধকরি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তারা আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধও নেই। তারা প্রকৃত গণতন্ত্রী নয়, মৌখিক গণতন্ত্রী। বাকশালের খোলস পাল্টালেও তারা মন মানসিকতা ও আচরণে বাকশালীই রয়ে গেছে।
আমরা এ হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারকে বলতে চাই, যার যার গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করার পথে বাধা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন। স্মরণ রাখা দরকার মন্দ কাজের ফল মন্দই হয়। এতে শুভ কোনো ফল লাভের সম্ভাবনা থাকে না।

 

প্রকাশ :অক্টোবর ২৯, ২০১৭ ২:২২ অপরাহ্ণ