স্বাস্থ্য ডেস্ক:
অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ডায়াবেটিস বা বহুমুত্র রোগ। সহজ ভাবে শরীরে অনিয়ন্ত্রিত গ্লুকোজ। এর অনেক রকম চিকিৎসা থাকলেও ভেষজ চিকিৎসা সব চাইতে নিরাপর। তাছাড়া খাদ্য অভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন, ব্যায়াম বা হাঁটাহাটি ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে বেশি ভূমিকা রাখে বিধায় অসুখটি বাড়ানো কমানো আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন গাছ গাছালীর উপদান দ্বারা।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় করল্লার রস খেলে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাবে,রক্তে ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়বে,অন্ত্রে গ্লুকোজের শোষণ কমে যাবে এবং রক্তে ক্ষতিকর চর্বির পরিমাণ কমে যাবে। প্রতিদিন ১০০মিলি করল্লার রস সমান দুই ভাগে ভাগ করে দিনে দুই বার খাবেন খাওয়ার পর পর।এছাড়াও করল্লার রসের পাউডার পাওয়া যায় যা প্রতি কেজি দেহের ওজনের জন্য ১০০মিগ্রা হিসাবে পরিমাণ বের করে তাকে সমান দু ভাগে ভাগ করে দিনে দু’বার ভরা পেটে খাবেন।
সাবধানতা:
মাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
ডুমুরের পাতা:
স্পেনের গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে প্রতিদিন সকালে নাস্তার সাথে ডুমুরের পাতার চা খেলে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিক রোগীদের দৈনিক ইনসুলিনের চাহিদা ১২% কমে যায় মাত্র এক মাসে। এছাড়াও ডুমুর পাতার চা পানে রক্তে ক্ষতিকর চর্বির মাত্রা কমে যায়।
ডুমুরের পাতার পলিফেনল হুবহু ইনসুলিনের মতো কাজ করে। আধা লিটার পানিতে ২ টেবিল চামচ শুকনা ডুমুরের পাতার গুড়া ছেড়ে দিন। এরপর ১৫মিনিট বা তার অধিক সময় ধরে ফুটান যাতে পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়।এখন এই চা পান করুন নাস্তার সাথে।
জিরা:
জিরা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়, রক্তে চর্বির মাত্রা কমায়, ডায়াবেটিক জটিলতার জন্য দায়ী AGE(Advanced Glycated End-product) তৈরিতে বাধা দেয়। কোনো কোনো গবেষক দাবী করেছেন জিরা’র কার্যকারিতা বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ঔষধ Glibenclamide(যেমন Dibenol) এর সমতুল্য। জিরার কিউমিন অ্যালডিহাইড ক্ষুদ্রান্তের(পেটের নাড়ী-ভুড়ির অংশ) ভিতরের দেয়ালের কোষের আলফা-গ্লুকোসাইডেজ এনজাইমকে কাজ করতে বাঁধা দেয় ফলে পরিপাককৃত শর্করাজাতীয় খাদ্যের ওলিগোস্যাকারাইড মনোস্যাকারাইডে(গ্লুকোজ) পরিণত হতে বাঁধাগ্রস্থ হয়।
আধা চা-চামচ সদ্য গুড়াকৃত জিরা পানি বা চায়ের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে সকালে নাস্তার আগে ও রাতের খাবারের আগে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা মনে রাখতে হবে যে জিরার কিউমিন অ্যালডিহাইড বাতাসের অক্সিজেনের সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই ঔষধীগুণ পেতে তাৎক্ষণিকভাবে গুড়াকৃত জিরাই ব্যবহার করতে হবে।
জামের বীচি:
আমাদের দেশে ডায়াবেটিসের ভেষজ চিকিৎসায় জামের বীচির ব্যবহার অতি পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে জামের বীচি (Eugenia jambolana)। জামের শুকনো বীচির গুড়া ১গ্রাম করে সকালে,দুপুরে ও রাতে খাওয়ার অব্যবহিত পূর্বে।
সাবধানতাঃ মাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
নিম পাতা:
নিম গাছের ঔষধি গুণের কথা আমরা সবাই জানি।নিম গাছের পাতার নির্যাস ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।
তাজা নিম পাতা বেঁটে তা ১০০মিলি মাঝারি মাত্রার গরম পানিতে (ফুটন্ত পানি নয়) মিশিয়ে একটি হটপটে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দিন। ২৪ ঘন্টা পর সেটি পান করুন। এটি কেবলমাত্র সকালে নাস্তার সময় পান করতে হবে।
সাবধানতা:
মাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদী নিমের নির্যাস সেবন লিভার ও কিডনীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।নিমের তেল (বীচি থেকে প্রাপ্ত) যদিও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় তবুও এটি একটি বিষাক্ত উপাদান;এক্ষেত্রে মৃত্যঝুঁকিও রয়েছে। এছাড়াও নিম পাতা গর্ভপাত ও গর্ভনিরোধে ব্যবহৃত হয়।
১০. গুরমার গাছের পাতা:
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পাতা ডায়াবেটিক বা সুগার রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। গুরমারের পাতা সেবনেই অনায়াসে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় রক্তে শর্করা মাত্রা মানে সুগার লেভেল। এক মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
– শুকনা পাতা গুঁড়া করে খাবারের আগে খেতে হবে।
– গবেষণায় দেখা গেছে গুরমার অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
– বহুমূত্র বা ডায়াবেটিক রোগ দেখা দেয়ার শুরুতে এটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি