২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:১৪

রোহিঙ্গাদের দুর্বিষহ জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মিয়ানমার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের মুখে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা ঘরবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে এসে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে কক্সবাজারে বৃষ্টি শুরু হলে তারা আরো অসহায় হয়ে পড়েন। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কেউ গাছের নিচে কেউ আবার কারো ঘরের কার্নিশের নিচে আশ্রয় নেন। তবে উখিয়া-টেকনাফের রাস্তার দুই ধারে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বৃষ্টিতে ভিজে নিজেদের শেষ সম্বলটুকু আঁকড়ে ধরে আছেন।

মিয়ানমারের মংডুর ভুচিডং এলাকার বাসিন্দা সালেহা আক্তার স্বামীকে হত্যার দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছেন। মিয়ানমার বাহিনীর গোলাবর্ষণ ও ঘরবাড়িতে আগুন দেয়ার কারণে স্বামীকে কবরও দিতে পারেননি। তিনি তিন সন্তানকে বাঁচাতে শুক্রবার সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে উখিয়ার টিভি টাওয়ার এলাকায় রাস্তার পাশে অবস্থান করছিলেন। এক রাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করলেও শুক্রবার সন্ধ্যার পরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে কোথাও মাথা গুঁজাতে না পারছে না। কোনো উপায় না পেয়ে অন্য হাজারো রোহিঙ্গার মতো বৃষ্টিতে ভিজেই রাস্তার ধারে বসে আছেন।

এদিকে অসহায় মা সালেহা বৃষ্টিতে ভিজে রাত কাটালেও তিন সন্তানকে কী খাওয়াবেন তা জানেন না। সালেহার মতো আরেক মা রহিমা বেগম বয়স ২৭ পেরিয়েছে। দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। মিয়ানমারের সেনারা তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার পর তারা একটি পাহাড়ে পাঁচ দিন ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে ছিলেন। তার স্বামী আবদুল মালেক বাচ্চাদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। জানেন না স্বামী কোথায়। তিনিও এখন সন্তান নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার বাহিনীর অবরোধের মুখে গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ স্টেশনে হামলা ও একটি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অভিযানে হেলিকপ্টার গানশিপেরও ব্যাপক ব্যবহার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সীমান্তে পুঁতে রাখা হয় স্থলমাইন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা এবং নারীদের গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। তাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে  বয়োবৃদ্ধ নারী এবং শিশুরাও রেহাই পায়নি। প্রাণ বাঁচাতে স্রোতের বেগে তারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এর মুখপাত্র ভিভিয়ান জানান, দেশটির সেনাবাহিনী মিয়ানমারের রাখাইনে কমপক্ষে এক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। গত কয়েকদিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ