২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৪৩

রংপুরে বাদামের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চরাঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে চরাঞ্চলে শুরু হয়েছে বাদাম কাটা ও মাড়াইয়ের মহাৎসব। ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে।

সরেজমিনে উপজেলার আরাজি হরিশ্বর, গুপিডাঙ্গা, প্রাননাথ চর, নাজিরদহ চর, পল্লীমারী চর, গদাইর চর, চর গনাই, হরিচরন শর্মা , ঢুসমারা চর, টাপুরচর, হয়রৎখাঁ, বিশ্বনাথসহ তিস্তা নদী বেষ্টিত গ্রামসহ চরগুলো ঘুরে দেখা গেছে দিগন্ত জুড়ে বাদাম আর বাদাম ক্ষেত। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমারহ। কৃষক কৃষাণিরা বাদাম তোলা ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।

বিশ্বনাথ চরের বাদাম চাষি নুর মোহাম্মদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলু তুলে চলতি মৌসুমে সে ২ দোন (২৫ শতকের দোন) জমিতে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ও পরামর্শে বাদাম চাষ করেছে। চিলমারী হাট থেকে দেশি বীজ এবং উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনা-৪ জাতের বীজ নিয়ে রোপন করেছে সে। ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত ২ দোন জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। সে আশা করছে প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ বাদাম হবে। বর্তমানে বাদাম ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা মণ দরে বিক্রয় হচ্ছে। সকল খরচ বাদ দিয়ে নুর মোহাম্মদ এ মৌসুমে বাদামে প্রায় ১৫ হাজার টাকা মতো লাভের আশা করছে।

বাদাম চাষে আগ্রহ কেন তা জানতে চাইলে তিনি জানান, কাউনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুর রহমান এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তাকে ধানের পাশাপাশি বাদাম, মরিচ, ভুট্টা, আখ, আলু, ডাল এসব চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাই তিনি বাদাম চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করে কিন্তু তারা যে সময় বীজ বিতরণ করে তখন বীজ নিয়ে কোনো কাজ হয় না। সরকারিভাবে কাউনিয়া উপজেলায় ভাল বীজ মাঘ মাস থেকে শুরু করে ফাল্গুন এর ১৫ তারিখের মধ্যে সরবরাহ করতে পারলে তাহলে উপজেলা আরও বাদাম ভাল হবে।

চর গনাই গ্রামের বাদাম চাষি দুদু মিয়া জানান, আলু তোলার পর সে ১০ দোন (২৫শতকে দোন) জমিতে বাদাম চাষ করেছে। চিলমারী হাট থেকে ৩ মন বীজ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনে এনে রোপন করেছে। ফসল তোলা পর্যন্ত ১০ দোন জমিতে তার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। সে আশা করছে প্রায় ৭০ মন বাদাম পাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান জানান, কাউনিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪শ ৯০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, অর্জন হয়েছে ৫শ ৫০হেক্টর। উপজেলায় মাইজচর, ত্রিদানা, বাসন্তি, বারি ৮, বারি ৬, বীনা ৪, বিনা ৮ ও স্থানীয় জাতের বাদাম চাষ হয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার চরাঞ্চলের জমি বাদাম চাষের জন্য উপযোগি। কম খরচে ভাল ফলন হয়। চলতি মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক দামও পাচ্ছে ভাল।

উপজেলার অনেক বাদাম চাষি জানান, তাদের কোনো আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় না। সরকারিভাবে তারা তেমন কোনো সহযোগিতা পায়না। বিশেষ করে সরকারিভাবে উন্নত বীজের ব্যবস্থা করলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত কম হতো। ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দিতে চায় না। কৃষি ব্যাংক ঋণ দিলেও ঘুষ ছাড়া পাওয়া যায় না। কৃষি ব্যাংকে কিছু দালাল আছে যারা ঋনের ব্যবস্থা করে কমিশনের মাধ্যমে। ঋন ছাড়াই এলাকার কৃষক নিজ চেষ্টায় চরাঞ্চলে এ বছর বাদাম চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

কাউনিয়ার বাদাম এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয়। কাউনিয়ার কৃষকদের সরকারি প্রনোদনাসহ উন্নত বীজ ও উন্নত প্রশিক্ষণ দিলে কাউনিয়ায় উৎপাদিত বাদাম বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানিয়েছে এলাকার কৃষক।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ২, ২০১৭ ১২:২৮ অপরাহ্ণ