দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
রপ্তানি চাঙ্গা করতে আগামী পাঁচ বছরের জন্যে এ খাতে উৎসে কর শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে রপ্তানীকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইএবি আয়োজিত বাজেট ভাবনা শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি সালাম মুর্শেদী।
তিনি বলেন, বর্তমানে রপ্তানিমুখী শিল্প বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব বাজারে ধাপে ধাপে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে কমেনি। এছাড়া ব্রেক্সিটের প্রভাব, ডলারে বিপরীতে টাকার অতি মূল্যায়ণ, ইউরো ও রুবল’র দরপতন, পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যের দাম কমে যাওয়াসহ কয়েকটি কারণে পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা হোঁচট খাচ্ছে। তাই আগামী পাঁচ বছরের জন্য রপ্তানিমুখী শিল্পে উৎস করা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
কর্পোরেট ট্যাক্স সম্পর্কে সালাম মুর্শেদী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক খাতে কর্পোরেট ট্যাক্স ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আমি মনে করি দেশিয় শিল্পের স্বার্থে রপ্তানিমুখী সব শিল্পে এই হার ১০ শতাংশ করা উচিত।
আবগারি শুল্ক প্রসঙ্গে ইএবির সভাপতি বলেন, ব্যাংকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রেখেছেন- এমন আমানতকারীর সংখ্যাই বেশি। কিন্তু প্রস্তাবিত আবগারি শুল্ক বাস্তবায়ন করা হলে গ্রাহকরা ব্যাংকে অর্থ আমানত রাখা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। তারা তখন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করবে। তাই আবগারি শুল্ক উঠিয়ে নেয়া দরকার।
প্রস্তাবিত ভ্যাট নিয়ে পোশাক খাত ভীত-এমন মন্তব্য করে বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ফারুখ হাসান খান বলেন, ভ্যাট নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীরা বাড়তি চাপে পড়বে কিনা তা নিয়েই উদ্যোক্তাদের শঙ্কা।
কারখানায় আগের তুলনায় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রেতাদের শর্তমতে, কারখানার কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেত অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে মালিকদের। কিন্তু তুলনামূলক পণ্যের দাম বাড়ায়নি তারা। ফলে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় রপ্তানিতে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই রপ্তানি বাড়াতে সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।
সংগঠনটির সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, শুধু নতুন মার্কেটে রপ্তানিতে ৩ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাচ্ছি। কিন্তু অন্য কোনো ক্ষেত্রে প্রণোদনা পাচ্ছি না। কর্পোরেট ট্যাক্স ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়ছে না। গত ১১ মাস ধরে এ খাতে গড় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। রপ্তানি বাড়াতে ২ বছরের জন্য উৎসে করা মওকুফ করা দরকার।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাক্সেসোরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্প এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আবদুল কাদের খান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অ্যাক্সেসোরিজে ও প্যাকেজিং খাতে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হয়নি। আগের ৩৫ শতাংশই বলবৎ রাখা হয়েছে। এটা ২০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে উৎস কর আগামী দুই বছরের জন্য মকুফ করার দাবি জানাচ্ছি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি আবু আলম চৌধুরী বলেন, প্রত্যাশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে ভ্যাট বাড়াবে না বলে আশা রাখি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এনামুল হক পাটোয়ারী বলেন, রপ্তানিতে কোন ফি থাকা উচিত নয়। কিন্তু আমাদের অনেক ফি দিতে হয়। আমরা যেহেতু রপ্তানির মাধ্যমে সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, তাই আমাদের সুজোগ দেওয়া উচিত। এতে সরকারও লাভবান হবে। এসময় লাইসেন্স প্রাপ্তি আরো সহজ করার দাবি জানান তিনি।
এফবিসিসিআই সাবেক পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে ব্যবসায়ীরা সংকটময় সময় পার করছে। ১৯৮০ সাল থেকে ব্যাবসা করে আসছি। এমন সংকটে কখনোই পড়িনি। শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন পরিশোধ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

