নিজস্ব প্রতিবেদক:
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হলে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, যে দেশে মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়, সেখানে সকল অধিকারই কেড়ে নেয়া হবে। জীবনের নিরাপত্তাও কেড়ে নেয়ে হচ্ছে। আজকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হলে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জবাবদিহিমুলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যারা গণমাধ্যমের কাছে জবাবদিহিতা করবে। আজকে উল্টোটা হয়েছে যে- গণমাধ্যম সরকারের কাছে জবাবদিহি করছে। তাই গণমাধ্যমের স্বাধিনতার লড়াইয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। ‘আজো পরাধীনতার শিকলে বাধা আমার স্বাধীনতা’ শিরোনামে এই সভা হয়।
১৬ জুন গণমাধ্যমের কালো দিবস পালন উপলক্ষে সভার আয়োজন করে ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি ও এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিএনপি নেতা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কাজী মনিরুজ্জামান, ইসমাইল তালুকদার খোকন, এম জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে পাহাড় ধসে হতাহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৬ জুন কালোদিবস স্মরণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজকের দিনে গণমাধ্যমের ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা ছিল বেশি। বর্তমানেও গণমাধ্যমের ব্যক্তিদের কালোব্যাজ ধারণ করা দরকার ছিল। দেশে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একসাথে চলতে পারেনা। যে দেশে গণতন্ত্র আর গণমাধ্যম একসাথে চলতে পারে না সে দেশকে গণতান্ত্রিক বলা যায় না। অথচ সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা আছে। কিন্তু সরকার সংবিধানপরিপন্থী কাজ করছে।
তিনি বলেন, আজকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটা বড় দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য। বিশ্বের বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছে- বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা সব বলতে ও লিখতে পারছে না। অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলেও গেছেন। এখন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এই পর্যায়ে চলে গেছে।
আমির খসরু বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সেখানে অব্যবস্থাপনা চলছে। আসলে জনগণের সরকার না থাকায় এটা হচ্ছে। প্রায় দুইশ লোক প্রাণ হারালেও পর্যাপ্ত ত্রাণ নেই। আসলে জবাবদিহিতা যেখানে থাকবে না সেখানে একের পর এক বিপর্যয় ঘটতে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনার ওয়ার্নিং ছিলো- অতিবৃষ্টির হলে পাহাড় ধস হয়। তারপরও আমরা দেখেছি ২শ’র কাছাকাছি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সেখানেও সাহায্য-সহযোগিতার যে সরকারের পক্ষ থেকে যে এফিসিয়েন্সি (সক্ষমতা) থাকার কথা ছিলো সেখানেও আমরা দুর্বলতা লক্ষ্য করছি। সবকিছুর শেষ কথা হচ্ছে, জবাবদিহিতা যেখানে থাকবে না, সেখানে একটার পর একটা বিপর্যয় ঘটবে এবং দেশের জনগণ তার শিকার হবে।
আহমেদ আযম খান বলেন, লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার প্রধান লক্ষ ছিল গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কিন্তু স্বাধীনতার পরই সর্বপ্রথম আঘাত আসে গণমাধ্যমের ওপর। এখনো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। আজো গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন যে পরিস্থিতি হয়েছিল গণমাধ্যমের ভাগ্য আজো বদলায়নি।
তিনি বলেন, সরকার আবারো একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমরা বলবো দেশে আগামী দিনে আর কোনো একতরফা নির্বাচন হবে না। ইতিমধ্যে দেশনেত্রী সেই ঘোষণা দিয়েছেন। আমরাও সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম