নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাহাড় ধসে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধ্বসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৫ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত হয়েছেন ৮২ জন। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। বান্দরবানে পাহাড় ধসের পর নিখোঁজ মা মেয়ের লাশ আজ উদ্ধার করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে পাহাড় ধসে দুইজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড় ধ্বসে বাবা-মেয়ে নিহত হয়েছেন।বুধবার দ্বিতীয় দিনে উদ্ধার কর্মীরা আরো ১০টি লাশ উদ্ধার করেন। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।এর মধ্যে রাঙ্গামাটি শহরে চার সেনা সদস্যসহ ৫৮ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, জুরাছড়ি উপজেলায় চারজন ও বিলাইছড়ি উপজেলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। রাঙ্গামাটি জেলাসদরসহ দুর্গত উপজেলাগুলোতে সেনাবাহিনীর ১১শ’ সেনাসদস্য উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার থেকে রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি রিজিয়ন সেনা সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা।তিনি জানান, সেনা বাহিনীর প্রতিটি ক্যাম্পের সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছেন।
উদ্ধার তৎপরতা চলাকালে রাঙ্গামাটি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে এই উদ্ধার কাজ মনিটর করেন রাঙ্গামাটি সদর জোনের জোন কমান্ডার লেফটেন্টে কর্নেল রিদোয়ান, রাঙ্গামাটি রিজিয়নের জিটু আই মেজর তানভীর সালেহ ও মেজর রাকিবুল হাসান।রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান, বিভিন্ন গ্রুপে তারা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। দ্বিতীয় দিনে উদ্ধার তৎপরতা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড গরমে মাটি শক্ত হয়ে পড়ায় সমস্যা হচ্ছে। তারপরও লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার মাসুদুর রহমান জানান, বুধবার লাশ এসেছে ১০ জনের। ছাড়া রাঙ্গামাটি শহরে ৮২ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩৯ জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদেরকে ভর্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৪৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।রাঙ্গামাটি শহরে গত চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বাজারে জ্বালানি তেলের সংকট দিয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্ন ঘটায় টেলিযোগাযোগ ব্যহত হচ্ছে। পানি ও বিদ্যুৎ সংকটে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।রাঙ্গমাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন জানান, রাঙ্গমাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শাল বন এলাকায় ১০০ মিটার রাস্তা ৩০ ফুট জায়গা পাহাড়ের নিচে তলিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ১০০ মিটার রাস্তা ৪০থেকে ৫০ ফুট গভীরে তলিয়ে গেছে।খাড়া পাহাড়ে পুনরায় কেটে বাইপাস করে সড়ক তৈরির চেষ্টা করছে সেনা বাহিনী ও সড়ক বিভাগের কর্মীরা।এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আদনান হোসেন জানান, কাউখালী-ঘাঘড়া সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া আভ্যন্তরীণ রুটে রাজার হাট, লিচু বাগান, কারিগর পাড়া রাস্তার উপর পাহাড় ধ্বসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।গত তিন দিনের একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চলে জেলার বিলাইছড়ির ফারুয়া, জুরাছড়ি এবং বরকলের ভুষণছড়ার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। জুরাছড়িতে ৩৩ শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ