২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:২০

পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
প্রতি বছর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বর্ষা এলেই উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের নানামুখী তৎপরতা চোখে পড়লেও বছরের অন্য সময়ে এ নিয়ে আর কোন কথা হয়না। যে কারণে প্রতি বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০১১ সালে এ উপজেলার ভালুকিয়া ও আমতলী এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ১২ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আবারো পাহাড় ধসের মতো ভয়াবহ অঘটন ঘটতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের জরিপমতে এ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ অনিশ্চিত বসবাস করছে। বিশেষ করে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাটুয়ার টেক থেকে মনখালী পর্যন্ত সাগর ঘেঁষা ইনানীর পাহাড়ে রাজাপালং ইউনিয়নের দোছরী, হরিণমারা, পালংখালী ইউনিয়নের থিমছড়ি, রতœাপালং ইউনিয়নের রেজু আমতলী সংলগ্ন গর্জনবনিয়া আছারতলীসহ প্রভৃতি পাহাড়ী এলাকায় এখন ঝুঁকিপূর্ণ জনবসতি এলাকায় পরিণত হলেও দেখার বা বলার কেউ নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, অর্থবিত্ত ও ভূমিহীন বেশির ভাগ ছিন্নমুল পরিবার সরকারি বনভূমির সুউচ্চ পাহাড়ে ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে। দুর্যোগ মুহুর্তে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অভিনব প্রচারণা চালিয়ে সর্বসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার কথা বললেও কে শুনে কার কথা। যে কারণে অতি বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, এসব পরিবারাগুলোতে স্থায়ীভাবে সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতির কোন উন্নতি হবে না। উপরন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনধধা রয়েছে। গতকাল বুধবার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি এলাকা ঘুরে স্থানীয় বসবাসকারীদের সাথে আলাপ করা হলে তারা জানান, গত বছরের প্রবল বর্ষণে বিশাল পাহাড়ী এলাকা ধসে পড়েছে। সেখানে কোন জনবসতি না থাকায় ভাগ্যক্রমে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তারা মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে এখানে পাহাড় ধসে প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু এসব এলাকায় সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু চক্র পাহাড় কেটে মাটি পাচার অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ মাঝে মধ্যে হানা দিয়ে মাটি ভর্তি ট্রাক আটক করলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এসব মাটি পাচারকারী চক্র অনায়াসে পাড় পেয়ে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে।
পাহাড় কাটার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ইনানী বনরেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল জানান, লোকবল সংকটের কারণে পাহাড় কাটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তথাপিও ইতিমধ্যে পাহাড় কেটে মাটি পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইনানী জাতীয় উদ্যানে অবৈধভাবে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাওয়া হলে দায়িত্বরত এনজিও সংস্থা শেড এর কোঅর্ডিনেটর মাজহারুল ইসলাম জানান, জাতীয় উদ্যানে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। সমন্বয় সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, বর্ষার শুরুতেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অন্যত্রে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএম

প্রকাশ :জুন ১৪, ২০১৭ ৬:৩৮ অপরাহ্ণ