২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৫০

জাতীয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্ত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসার অনুমতি দেয়নি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এ ইফতারের আয়োজক। আগামী ২১ জুন এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। গত ১২ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন দু’টির নেতারা এ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের অংশগ্রহণের বিষয়টি পূর্বাহ্নে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করা হয়েছিল।  তিনি মৌখিক সম্মতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক আবেদনের পর নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দেখিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে জাতীয় প্রেসক্লাবে আসতে বাধা দিচ্ছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বিএফইউজে, ডিইউজে এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্তকে চরম অসৌজন্যমূলক, বিদ্বেষপ্রসূত ও ন্যাক্কারজনক বলে অভিহিত করেছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাব একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এর ব্যবস্থাপনা কমিটির কেউ কেউ বিশেষ কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী হতে পারেন। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিফলন ঘটবে- এটা মেনে নেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। সঙ্গত কারণেই ধরে নেয়া যায় যে, বেগম খালেদা জিয়াকে আসতে বাধা দেয়ার পেছনে প্রেসক্লাবের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির রাজনৈতিক মনোবৃত্তি প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। রাজনৈতিক সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই তারা দেশের একজন সম্মানীয় নেত্রীর প্রতি এমন অসৌজন্যমূলক মনোভাব প্রদর্শন করতে পেরেছে, এ কথা বলাই বাহুল্য।
জাতীয় প্রেসক্লাব আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠান। এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি সব রকম রাজনৈতিক বিতর্কের উর্ধ্বে থাকবে এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু ক্লাবের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সবাইকে হতাশ করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের মত একটি প্রতিষ্ঠানও যে বর্তমানে দলীয়করণের বাইরে নেই, এ ঘটনা তারই প্রমান বহন করে।
এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অবিস্মরণীয় অবদান থাকায় জাতীয় ক্লাব একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে ।  এজন্য এটাকে বলা হয় ‘গণতন্ত্রের দ্বীপ’ বা ‘ আইল্যান্ড অব ডেমোক্রেসী’। সৈ¦রাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশের দুই শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা অনেকবার এখানে এসে জাতির উদ্দেশে কথা বলেছেন। সে কারণে এ ক্লাব জাতির কাছে পেয়েছে ভিন্ন মর্যাদা। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তির দলবাজির কারণে সে মর্যাদা  আজ ভূলুণ্ঠিত হতে বসেছে। ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি আজ দলীয়করণের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। কেবলমাত্র বিএনপি চেয়ারপার্সন হওয়ার কারণেই যে বেগম খালেদা জিয়াকে সেখানে যেতে বাধা দেয়া হলো সে কথা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ রাখেনা।
অথচ যখন জাতীয়তাবাদী আদর্শের সমর্থক সাংবাদিকগণ এ প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে ছিলেন, তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে যেতে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি। বরং, দেশের একজন শীর্ষনেত্রীকে যথাযথ সম্মানই প্রর্দশন করা হয়েছে। আমরা একথা বলছি না যে, সরকারের ইশারায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটা যে সরকার সমর্থক অতিউৎসাহী তল্পীবাহক কিছু ব্যক্তির কাজ সেটা বলা নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবেনা। তবে, এ ঘটনার দায় যে সরকার পক্ষের ওপর কিছুটা হলেও বর্তাবে সেটা অস্বীকার করা যাবেনা।
বেগম খালেদা জিয়াকে প্রেসক্লাবে আসতে না দেয়ার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ যে বিষয়টিকে উল্লেখ করেছে তাকে খোড়া অজুহাত বলাই যুক্তিযুক্ত। তার নিরাপত্তা দেয়ার সামর্থ কøাব কর্তৃপক্ষের নেই- এটাই নাকি অনুমতি না দেয়ার কারণ। বেগম খালেদা জিয়া এ রমজান মাসে বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কোনো অনুষ্ঠানস্থলের কর্তৃপক্ষই নিরাপত্তার অজুহাত তুলে তাকে যেতে বাধা দেয়নি। প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ কেন এ বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে তুলে ধরলো তা বোধগম্য নয়। কারণ, অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া এলে তার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব যারা তাকে দাওয়াত দিয়ে আনবে তাদের, ক্লাব কর্তৃপক্ষের নয়। বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়, নিজেদের একটি খারাপ কাজকে জায়েজ করার জন্যই প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ একটি অগ্রহণযোগ্য কারণকে সামনে টেনে এনেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনকে ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আসতে বাধা দিয়ে কর্তৃপক্ষ একটি ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। যা এ দেশের মানুষ কখনোই ভূলে যাবেনা। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবং বিশেষ মহলের কৃপা দৃষ্টি লাভের আশায় যে তারা এটা করেছেন সেটা বুঝতে কারোর বাকি আছে বলে মনে হয় না। আমরা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাই এবং একই সঙ্গে জাতীয় কবির একটি গানের দু’টি চরণ তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-‘ চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়, আজ যে আছে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়…।

 

প্রকাশ :জুন ১৩, ২০১৭ ২:৩৩ অপরাহ্ণ