২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:০৯

তিন জেলায় পাহাড় ধসে নারী-শিশুসহ নিহত ৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৩২ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন। নিখোঁজ রয়েছে ২ জন।

এদের মধ্যে রাঙামাটিতে ১৪, বান্দরবানে ১০ ও চট্টগ্রামে ৮ জন নিহত হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাতে তিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটি এখন বিদ্যুৎবিহীন। যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেকটা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।

নিহতদের মধ্যে রাঙামাটি শহরে ৮ জন। তারা হলেন, শহরের ভেদভেদি এলাকার রুমা আক্তার, নুড়িয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস। কাপ্তাইয়ে নিহত ২ হলেন উপজেলার কারিগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা অনুচিং মারমা ও নিকি মারমা। চন্দ্রঘোনায় ২ জন রয়েছে। অন্য ২ জনের প্রাথমিক তথ্য জানা যায়নি।

মঙ্গলবার সকালে জেলা শহর থেকে আটজন ও কাপ্তাই উপজেলা থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

এদিকে সোমবার রাত থেকে রাঙ্গামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটির সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান প্রতিনিধি  জানান, প্রবল বর্ষণে বান্দরবানে পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতও হয়েছে আও বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে শহরে ৪ জন নিহত হয়েছে। তারা হলো, আগাপাড়ার একই পরিবারের শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬), লতা বড়ুয়া (৫) ও কালাঘাটা কবরস্থান এলাকার রেবি ত্রিপুরা (১৮)।

তারপর লেমুঘিরিপাড়ায় ৩ ও কোহালংয়ে ৩ জন নিহত হয়েছে।  এই ৬ জনের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন।

এছাড়া জাইল্লাপাড়ায় কামরুন্নাহার ও তার মেয়ে সুফিয়া (২০) নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছে। আর গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন- পসান ত্রিপুরা ও বীর বাহাদুর ত্রিপুরা।

সদর থানার ওসি মো. রফিক উল্লাহ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান জানান, অতি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৪ জনসহ ৮ জন নিহত হয়েছে। সোমবার ভোরে দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়ি ইউনিয়নে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।

আবু ইউছুফ চৌধুরী জানান, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আসগর আলীর কাঁচা ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় আজগর আলীর শিশুকন্যা মাহিয়া মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।

এ ছাড়া ছনবুনিয়া উপজাতিপাড়ায় একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে একই পরিবারের দুই শিশু কেউচা কেয়াং (১০), মেমাউ কেয়াং (১৩) এবং গৃহবধূ মোকাইং কেয়াং (৫০) নিহত হন।

এ ঘটনায় ওই পরিবারের সানুউ কেয়াং (২১) ও বেলাউ কেয়াং (২৮) নামের আরো দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের বান্দরবান হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ চৌধুরী।

চন্দনাইশ থানার ওসি (তদন্ত) মো. শাখায়াত হোসেন বলেন, ধোপাছড়ি এলাকাতে পাহাড় ধসে ৪ জনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। কিন্তু আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না। ইউনিয়নটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অনেকটা বিচ্ছিন্ন। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সেখানে কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদস্থ কন্ট্রোলরুম কর্মকর্তারা জানান, চন্দনাইশে পাহাড় ধসের খবর পেয়েছি। পটিয়া স্টেশন থেকে আমাদের একটি ইউনিট যাচ্ছে।

দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ

 

 

প্রকাশ :জুন ১৩, ২০১৭ ১২:৩৮ অপরাহ্ণ