২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:০৯

শিশুদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানানো উচিত?

এখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের শব্দ হচ্ছে করোনাভাইরাস। দ্রুত গতিতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি সম্পর্কে বিভিন্ন দিক থেকে নানা পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে।

তেমন একটি বিষয়বস্তু হচ্ছে শিশুদেরকে এ ভাইরাস সম্পর্কে বলা ঠিক হবে কিনা? কেউ কেউ বলছেন ভাইরাসটি নিয়ে শিশুদের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়, কিন্তু অন্যদের অভিমত হচ্ছে করোনাভাইরাসের কথা শিশুদের কাছে লুকাবার মতো বিষয় নয়। বরং এ ভাইরাস সম্পর্কে শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করাই তুলনামূলক ভালো হতে পারে।

আমরা চাই যে করোনাভাইরাসের এ বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব থেকে আমাদের শিশুরা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুক, কিন্তু তার মানে এটা নয় যে তাদের কাছে ভাইরাসটি সম্পর্কে সব তথ্য গোপন করবেন। বরং তাদের সঙ্গে করোনাভাইরাসের কিছু দিক নিয়ে কথা বলার ভালো কারণ রয়েছে।

যে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে সে ভাইরাসটির নাম শিশুদের কাছে বেশিদিন গোপন থাকে না। করোনাভাইরাসও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রথমত, তারা বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের কাছে ভাইরাসটি সম্পর্কে শুনে থাকতে পারে। তাই তাদের কাছে সম্পূর্ণ তথ্য গোপন করলে অথবা তারা যখন ভাইরাসটি সম্পর্কে জানতে চায় তখন তাদেরকে ভয়ার্ত স্বরে থামিয়ে দেয়া হলে তাদের মনে করোনাভাইরাস সম্পর্কে তীব্র ভয় ঢুকে যাবে। তারা ভাববে, করোনাভাইরাস এত বেশি ভয়ংকর যে এটা সম্পর্কে কথা বলা যাবে না। বড়দের ভয়ার্ত আচরণ (হোক সেটা মেকি বা আসল) শিশুদের ভয়ে ইন্ধন যোগাবে।

শিশুদেরকে ভয় অথবা আতঙ্কের মধ্যে রাখলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই তারা ভাইরাসটির কথা তুললে এমন আচরণ করবেন না যাতে তাদের আতঙ্ক বাড়ে। তাদেরকে সহজ ভাষায় করোনাভাইরাস সম্পর্কে অবহিত করুন। উদাহরণস্বরূপ, এটি হচ্ছে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস। আমরা যে ঠান্ডায় (কমন কোল্ড) ভুগে থাকি তাও একটি করোনাভাইরাসের কারণে। এছাড়া আরো কিছু করোনাভাইরাস রয়েছে যা মানুষকে অসুস্থ করতে পারে। নতুন করোনাভাইরাসটি অন্যান্য করোনাভাইরাসের তুলনায় কতটুকু ব্যতিক্রম তা জানতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাদেরকে প্রশ্ন করারও সুযোগ দিতে হবে, যেমন- ভাইরাসটি তাদেরকে আক্রমণ করতে পারবে কিনা? আপনি বলে যাবেন, তারা শুধু শুনবে- এমন নিয়মে চললে শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাদের মনে জমে থাকা প্রশ্নগুলো শুনুন ও সঠিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। তাদেরকে জানাতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জনসাধারণকে নিরাপদে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাদেরকে ভুল তথ্য না দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

শিশুর বয়স অনুসারে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানাতে হবে। যা বলতে চাচ্ছেন তা বোঝার ক্ষমতা তাদের রয়েছে কিনা বিবেচনা করুন। যেমন- দুই থেকে চার বছর বয়সের শিশুদের সঙ্গে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত গভীর আলোচনার প্রয়োজন নেই।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ করা হয়েছে কেন জানতে চাইতে পারেন। তাদেরকে বলুন যে, করোনাভাইরাসের কারণে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে স্কুল বন্ধ করা হয়েছে এবং ভাইরাসটি থেকে সুস্থ থাকার একটি ভালো উপায় হচ্ছে ঘনঘন হাত ধোয়া।

তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সৎ থাকুন। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক কিছু বলার দরকার নেই। তাদেরকে ভীত করবেন না, আশ্বস্ত করুন।

শিশুদের জগৎ বড়ই বিচিত্র। তারা যেকোনো প্রশ্ন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদেরকে করোনাভাইরাসে আক্রমণ করলে আমরা কি মরে যাব? তাদেরকে আশ্বস্ত করতে হবে করোনাভাইরাসের আক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই কম। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেশিরভাগ মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ হচ্ছেন। আমরা সতর্ক থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে পারি। ঝুঁকি কমাতে প্রতিরোধমূলক উপায় মেনে চলতে হবে, যেমন- সঠিকভাবে হাত ধোয়া ও কাশি-হাঁচি দেয়া মানুষ থেকে দূরে থাকা।

শিশুরা মা-বাবাকে এ প্রশ্নটি করতে পারে: তুমি কি করোনাভাইরাসের ভয়ে আতঙ্কিত? এ প্রশ্নের উত্তরে গভীর ভয়ের কথা প্রকাশের প্রয়োজন নেই, শুধু বলুন যে কিছুটা দুশ্চিন্তা হচ্ছে। তাদেরকে এরকম কথা বলবেন না: আমি খুব ভয় পাচ্ছি যে আমার পরিবারের কাউকে ভাইরাসটি আক্রমণ করতে পারে। অন্য দশজন পিতামাতার মতো আপনাদের মনেও করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ভীতি থাকতে পারে, কিন্তু এ ভয়কে শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া ভালো কিছু নয়। শিশুদেরকে ভয়মুক্ত পরিবেশে বড় হতে দিন।

শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করুন, কিন্তু ভয় প্রদর্শন করবেন না। তারা করোনাভাইরাস সম্পর্কে দুশ্চিন্তিত না হলে অথবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে তাদের মনে ভয়ের বীজ রোপন করতে যাবেন না। মনে রাখবেন, শৈশবের ভীতি মানসিক বিকাশসাধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভুলেও ভয় মিশ্রিত মোটিভেট করবেন না। উদাহরণস্বরূপ, তারা হাত ধুতে ভুলে গেলে এভাবে কথা বলা উচিত নয়: তুমি কি মরতে চাচ্ছো?

সহজ ভাষায় শিশুদেরকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানালে তারাও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বড়দের অনুকরণ করবে। এতে ভাইরাসটি থেকে পরিবারকে রক্ষার জন্য যে দুশ্চিন্তা এসেছে তা কমে যাবে। শৈশবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বীজ রোপন করা গেলে তা সারাজীবন সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মতো বিপর্যয়ে বড়রা স্বাভাবিক আচরণ করে সুরক্ষিত থাকার উপায় মেনে চললে তা শিশুদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে- তারাও বড় হয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।

তথ্যসূত্র: ওয়েব এমডি

প্রকাশ :মার্চ ১৮, ২০২০ ২:৫৬ অপরাহ্ণ