গত ১৬ মার্চ দুদক প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল আসামিদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়া-নেওয়ার অভিযোগে চার্জগঠনের প্রস্তাব করেন।
ওইদিন আসামি মিজানুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী তার আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে অব্যাহতির আবেদন করে শুনানি করেন। বুধবার এনামুল বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান অব্যাহতির আবেদন করে শুনানি করেন। শুনানি শেষে বিচারক উভয় আসামির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠনের আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্ল্যা আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ডিআইজি মিজানের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানকারী ছিলেন। অনুসন্ধানকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সাংবাদ প্রকাশিত হয় যে, ডিআইজি মিজান অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টে এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ/উৎকোচ দিয়েছেন। তৎক্ষণিক দুদক একটি তদন্ত কমিটি করে প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর এ সংক্রান্তে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিও ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি রজু করা হয়।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষীদের বক্তব্য গ্রহণ এবং এনটিএমসি হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজান একটি বাজারের ব্যাগে কিছু বইসহ যথাক্রমে ২৫ লাখ টাকা ও ১৫ লাখ টাকা রমনা পার্কে এনামুল বাছিরকে দুইদফায় প্রদান করেন। যার চাক্ষুস সাক্ষী আসামি মিজানের দেহরক্ষী হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি মো. সাদ্দাম হোসেন। এছাড়া মিজান ও বাছিরের মুঠোফোনের কথোপকথন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাছির তার ছেলেকে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে আনা নেয়ার জন্য মিজানের কাছে একটি গাড়িও দাবি করেন, যা তিনি দুদকের বিভাগীয় তদন্ত টিমের কাছে স্বীকারও করেছেন।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামি মিজান ও বাছির অবৈধভাবে দুটি পৃথক সিম ব্যবহার করে একে অপরের মধ্যে কথোপকথন ক্ষুদেবার্তা আদান-প্রদান করেছেন। সিম দুটি হেদরক্ষী হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি সাদ্দামের নাম ক্রয় করা। হৃদয়ের নামে কেনা সিমটি মিজান বাছিরকে একটি সামসাং মোবাইলসহ প্রদান করেন। এবং সাদ্দামের নামে কেনা সিমটি নিজে বাছিরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গোপনে ব্যবহার করেন। নম্বরগুলি থেকে মিজান বিভিন্ন সময় ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে বাছিলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন মর্মে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্তে আরও প্রমাণিত হয় যে, মিজান অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে বাছিরের সঙ্গে ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে সংরক্ষণ করেন এবং পরবর্তীতে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। মিজান নিজে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ থেকে বাচাঁর জন্যই অসৎ উদ্দেশ্যে বাছিরকে ঘুষ প্রদাণ করে প্রভাবিত করেন। আর বাছির সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তার উপর অর্পিত দায়িত্বপালনকালে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ঘুষ গ্রহণ করে গোপন করেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের একই কর্মকর্তা আসামি মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলার পর ২২ জুলাই রাতে রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম এলাকা থেকে এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে একই আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে ঘুষ প্রদানের তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ করে আত্মগোপনে থাকা ডিআইজি মিজানকে একই বছর ১ জুলাই হাইকোর্ট পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরদিন নিম্ন আদালতে হাজির করা হলে তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তারা কারাগারেই আছেন।