২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:২৩

অতিথি শূন্য হওয়ার পথে তারকা হোটেলগুলো

বছরের এ সময়টা অতিথিদের সেবায় ব্যস্ত সময় পার করেন তারকা  হোটেলগুলোর কর্মীরা। তবে এখন করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রতিনিয়ত কমছে অতিথির সংখ্যা। নতুন করে অতিথি না আসলে হোটেলগুলো  শূন্য হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে চিন্তিত হোটেল মালিকরা। আর্থিক ক্ষতির মুখে কর্মীদের বেতন-ভাতা নিয়ে শঙ্কিত আছেন তারা।

সারাদেশে তারকা হোটেল আছে  প্রায় ৪৫টি। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত হোটেলগুলোর অতিথির চাপ থাকে সব চেয়ে বেশি। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে জানুয়ারি মাস থেকে তারকা হোটেলগুলোতে অতিথিদের আগাম বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়ে। একইসঙ্গে কমতে থাকে নতুন করে অতিথিদের বুকিং।

শনিবার (১৪ মার্চ) দেশে আরও  দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। এর আগে তিন জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করেছে কয়েকটি দেশ। এদিকে  ইউরোপে ফ্লাইট বন্ধ করেছে বাংলাদেশ।

এ অবস্থায় তারকা হোটেলগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যবসায়িক কাজে বিদেশিরা বেশি আসেন। তারকা হোটেলে তারা থাকার পাশপাশি ব্যবসায়িক মিটিং করেন। এছাড়া পর্যটকরাও ঘুরতে এসে অনেকে তারকা হোটেলে ওঠেন। অন্যদিকে হোটেলের বলরুমগুলোতে হয় নানা রকম মেলা, সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠান। প্রায় প্রতিটি হোটেলেই এ সময়ে ৭০-৮০ শতাংশ রুমে অতিথি থাকেন। কোনও কোনও হোটেলে শতভাগ রুম অতিথিতে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্রমাগত বুকিং বাতিল হয়েছে। নতুন করে অতিথিরা বুকিং করছেন না। যারা খুব প্রয়োজনে এসেছিলেন তারাও সফর সংক্ষিপ্ত করে নিজে দেশে ফিরে যাচ্ছেন। খরচ কমাতে কোনও কোনও হোটেলে কর্মী কমানো হচ্ছে।

রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোর একটি হচ্ছে হোটেল স্যারিনা। এই হোটেলের নির্বাহী পরিচালক মাশকুর সারওয়ার বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ক্রমাগত অতিথি কমছে। পুরনো বুকিং তো বাতিল হচ্ছেই, নতুন কোনও বুকিং হচ্ছে না। দেশের প্রায় সব হোটলেই এ অবস্থা বিরাজ করছে।অবস্থার উন্নতি না ঘটলে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে হবে।’

তারকা হোটলগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা)। এই সংগঠনের সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিদেশি অতিথিদের বেশির ভাগই আসেন চীন, জাপান, ভারত, ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও শ্রীলঙ্কা থেকে। সাধারণত বছরের এ সময়ে ৭০ শতাংশের বেশি রুমে অতিথি থাকলেও করোনার প্রভাবে সেটি ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কার্যত সারাবিশ্ব বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, যার কারণে অতিথি আসছে না। বরং সবাই আটকা পড়ার ভয়ে নিজ থেকে ফিরে যাচ্ছেন। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকলে হোটেলগুলো একেবারেই অতিথি শূন্য হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিহা) প্রেসিডেন্ট  এইচ এম হাকিম আলী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি। তবে সংগঠনটির সচিব মহসিন হক হিমেল বলেন, ‘সংগঠনের সদস্য হোটেলগুলো থেকে তথ্য আসছে যে,অতিথির সংখ্যা ক্রমাগত কমছে।   আয় কমে গেছে। ফলে হোটেল পরিচালনায় লোকসান হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় সংকট আরও বাড়ছে।পরিস্থিতি খারাপ হলে হোটেলগুলো একেবারে অতিথি শূন্য হয়ে পড়বে।

হোটেলগুলোকে অতিথি যোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ট্যুর অপারেটররা। দেশে আসা পর্যটকদের জন্য তারা হোটেলের রুম বুক করেন। করোনার প্রভাবে পর্যটকরা বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত বাতিল করায় ট্যুর অপারেটরদের বাতিল করতে হচ্ছে হোটেল বুকিং। ‘জার্নি প্লাস’ নামের একটি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তৌফিক রহমান। তিনি একইসঙ্গে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব। তৌফিক রহমান বলেন, ‘যেসব পর্যটক আসার কথা ছিল— তারা তো আসেনি, আগেই বুকিং বাতিল করেছে। স্লোভেনিয়া,ইউক্রেন, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল বেশ কিছু পর্যটকের। এখন নতুন করে কোনও বুকিং নেই। ফলে পর্যটক না আাসায় আমাদেরও হোটেল বুকিংসহ অন্যান্য যে প্রস্তুতি নেয়েছিলাম, সেগুলো বাতিল কতে হয়েছে।’

অতিথি সংকটের কারণে বেকায়দায় পড়েছে হোটেল ও ট্যুর অপারেটর ব্যবসায়ীরা। ফলে চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন এই খাতের কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেলের কর্মীরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হোটেলে নতুন কোনও বুকিং হচ্ছে না, অতিথিও না থাকার মতো। ফলে হোটেলগুলোতে জনবল তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কর্মী ছাটাইয়ের ঘটনা ঘটলে অনেকেই বিপদে পড়বেন।

প্রকাশ :মার্চ ১৬, ২০২০ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ