করোনাভাইরাস ঠেকাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের প্রস্তুত করা হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
শনিবার (১৪ মার্চ) অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানান।
হ্যান্ড সেনিটাইজারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আব্দুল মুহিত বলেন, ‘বায়োমেডিক্যাল রিসার্স সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর আ ব ম ফারুক স্যার এবং ফার্মেসী অনুষদের ডিন প্রফেসর এস এম আব্দুর রহমান স্যারের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, ড. শেখ জহির রায়হান ও আমি ফার্মেসী বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে এটি শুরু করেছি। ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ বোতল (প্রতিটি ১০০ মিলি করে) তৈরি করেছি। আজ আরো ২০০ বোতল তৈরি করবো আমরা। প্রথম পর্যায়ে আমাদের ফার্মেসির শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে দিতে চাই। এরপর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মাঝে দিতে চাই। তবে আমাদের তৈরি করার সুযোগ সীমিত। ফান্ড পেলে এটি আরো বেশি প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।’
হ্যান্ড সেনিটাইজারের ফরমুলেশন হিসেবে যা ব্যবহার করা হয়েছে সেটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১০০ মিলির জন্য আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ৭২ থেকে ৭৫ মিলি, গ্লিসারিন ২ থেকে ৪ মিলি, অ্যালোভেরা জেল ১ থেকে ৩ মিলি, লেমন অয়েল ৫ থেকে ৭ ফোঁটা, ফুটানো ঠাণ্ডা পানি ২০ মিলি, বোতল পরিমাণ মতো সাইজের ১ টি।’
এর ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘খুব অল্প পরিমাণে (তিন বা চার ফোঁটা) হাতের তালুতে নিয়ে দুই হাতে ভালো করে ঘষতে হবে। যতক্ষণ না হাত শুষ্ক হয়, ততক্ষণ ঘষতে হবে। হ্যান্ড সেনিটাইজার মেখে কোনো খাদ্যদ্রব্য খাওয়া উচিত নয়।’
হ্যান্ড স্যানিটাইজার কীভাবে তৈরি করতে হয় এ ব্যাপারে মুহিত বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানো আশ্চর্য কিছু নয়। বাসাতেই এটি তৈরি করতে পারবেন যদি ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল যোগাড় করতে পারেন। ৭০ শতাংশ ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল এবং অন্যান্য উপাদান যোগ করেই এটি তৈরি করা যায়। ৭০ শতাংশ ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলে ভাইরাসের প্রোটিন অংশ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া মারা যায়।’
পরামর্শস্বরূপ তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু অ্যালকোহল হাত শুষ্ক করে, তাই কিছুটা ময়েশ্চারাইজার যেমন গ্লিসারিন এবং অ্যালোভেরা জেল যোগ করতে পারেন। ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের কিছু তীব্র গন্ধ আছে। গন্ধ দূর করার জন্য লেমন অয়েল কয়েক ফোঁটা যোগ করতে পারেন। আর ভিটামিন ই ক্যাপসুল দুই একটি যোগ করতে পারলে মন্দ হয় না। এছাড়া প্রস্তুত করার কাজটি গুণগতভাবে সম্পন্ন করলেই তৈরি হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার।’
পরামর্শস্বরূপ তিনি আরো বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করলেই হয়। হ্যান্ড সেনিটাইজারের চেয়ে সাবান দিয়ে হাত মুখ পরিষ্কার করা বেশি ভালো। কিন্তু বিশেষ বিশেষ সময়ে সাবান ও পানি আশেপাশে না থাকলে যেমন বিভিন্ন গণপরিবহনে যাতায়াতের পরে, অনেকের সাথে হ্যান্ডশেক করলে, অফিস বা স্কুল কলেজে থাকাকালীন কিংবা হাট বাজার করার সময় আপনার আমার অবচেতন মনেই অপরিস্কার হাত আমাদের দেহের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে মুখে, চোখে, নাকে লেগে যেতে পারে। তাই সেই সময়গুলিতে এটি খুব কাজে লাগতে পারে।’
হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে যুক্ত থাকা মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুবর্ণ সাদিক বলেন, ‘যেহেতু বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অনেক সংকট তাই অনেকেই বেশি দাম দিয়েও কিনতে পারছে না। এর প্রেক্ষিতে আমরা এটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় ও ক্লাস রুমে দেওয়ার জন্য জোন ঠিক করেছি। চাহিদা অনেক থাকলেও আমাদের নিজেদের অর্থায়নে চাহিদা পূরণ করতে পারবো না। তবে অর্থায়নে সহযোগিতা পেলে এটি তৈরি করে সবার চাহিদা পূরণ করতে পারবো।’