প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি পুরো ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার। কিন্তু থামছে না বিপর্যয়। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪১ জনে। শনিবার (১৪ মার্চ) পর্যন্ত দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ১৫৭ জন। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১ হাজার ৯৬৬ জন রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রতিরোধে গত সোমবার থেকে পুরো দেশকে রেডজোনের আওতাভুক্ত ঘোষণা করার পর থেকেই গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে দেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিউজিয়াম, থিয়েটার, সিনেমা, স্টেডিয়াম, কনসার্টসহ জনসমাগমের স্থানসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির ব্যস্ততম শহর গুলো পরিণত হয়েছে জনশূন্য নগরীতে। সারা দেশে ফার্মেসি এবং আলিমেন্টারি (খাবারের দোকান) ছাড়া সব কিছুই বন্ধ রয়েছে ।
ইতালির মিলানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি শোহেভ আহেমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা এখানে বন্দি জীবনযাপন করছি, রাস্তা ফাঁকা জনশূন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাহিরে যেতে মানা করছে।
ভেসেন্সা শহরের বাসিন্দা সিদ্দিক হাওলাদার বলেন, এখানের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্রসহ সব কিছু বন্ধ রয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা । জরুরি কাজ ছাড়া বাহিরে যাওয়া যাচ্ছে না, অযথা বাহিরে গেলেই জরিমানা করা হচ্ছে। এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুব আতঙ্কিত। তবে নিয়ম মেনে চললে আশা করছি আমরা খুব শীঘ্রই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব।
ইতালির পাদোভা অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য শহরের চেয়ে বেশি। সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ইব্রাহিম খান বলেন, শুক্রবার (১৩ মার্চ) ইতালিতে একদিনেই ১৭৫ জনের মৃত্যুর খবরে সবাই আতঙ্কিত। শহরের ব্যস্ততম সড়কপথগুলো আজ ফাঁকা, শপিংমল হাটবাজার পর্যটন কেন্দ্র জনশূন্য। সবাই বাহিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে গেলে জরিমানাও করা হচ্ছে।
এদিকে ইতালির সাথে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। দেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় গণপরিবহনগুলোর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কিছু কিছু বাস চললেও প্রায় সব ফাঁকা। বাসের ভিতরে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে কোনো যাত্রী চালকের কাছাকাছি যেতে না পারে।
ইতালির সব শহরের প্রবেশদ্বারে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এক শহর থেকে অন্য শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ এই নিয়ম বা আইন অমান্য করলে তাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রভাবে থমকে আছে গোটা ইতালি। অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এমন আশঙ্কা করছে দেশটির অর্থনীতিবিদরা।
এ দিকে ইতালির বিভিন্ন শহরের বসবাসরত প্রায় ২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিরা আতঙ্কিত।
ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার বলেন, ‘এই মুহূর্তে সকলকে ইতালিয়ান সরকারের আইন মানতে হবে এবং বাসায় অবস্থান করে দেশকে সুরক্ষা করতে হবে। আপনার সচেতনতা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। নিজে এবং অন্যের সুরক্ষায় সতর্কতা অবলম্বন করুন। আপাতত বাংলাদেশ ভ্রমণে বিরত থাকুন।’