দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই অবস্থায় রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব যেন না হয় সে ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মশা নিধনসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করার সবকিছু করতে সংশ্লিষ্টদের বলেছে উচ্চ আদালত।
বুধবার এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি করে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু, বিএসটিআই এর পক্ষে সরকার এম আর হাসান মামুন।
পরে আদালত থেকে বেরিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকবদের বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণ মামলায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পৃথকভাবে তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত সেটি পর্যালোচনা করে সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানো পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট হয়নি। গত বছর মৌসুম আসার আগেই দুই সিটির সিওকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছিল যাতে মশা নিধন সঠিকভাবে হয়। ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব থেকে মানুষ রক্ষা যায়। কিন্তু সেটিতো হয়নি। গত বছর ডেঙ্গু নিয়ে অস্তির অবস্থা জাতি লক্ষ্য করেছে। সেটি আজকে দুই সিটিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আদালত।
দুই সিটি করপোরেশনের আইনজীবীদের আদালত বলেছেন, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এই ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যদি কোনোভাবে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুরও প্রাদুর্ভাবও শুরু হয় তখন কিন্তু মানুষের শেষ জায়গাটিও থাকবে না। সুতরাং আপনারা সতর্ক হোন, মশা নিধনে মনোযোগী হন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করার দরকার তাই করেন। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন আদালত।
আইনজীবী বলেন, এর আগে আদালত বায়ুদূষণ মুক্ত করতে নয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশনার পর পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার চারপাশে পাচঁটি জেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া টায়ার জ্বালিয়ে তেল উৎপাদনের যে কাজ শুরু হয়েছে, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তার অধিকাংশই বন্ধ করা হয়েছে বলেও আদালতকে জানানো হয়।
গত ২৬ নভেম্বর রাজধানী ঢাকাকে ধূলামুক্ত করতে সব রাস্তা, ফুটপাত ও ফ্লাইওভারে জমে থাকা ধুলাবালি, ময়লা অপসারণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ধূলা দূর করতে দিনে কমপক্ষে দুইবার পানি ছিটাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলায় পরিবেশ আইন ভঙ্গ করে গড়ে ওঠা ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে পরিবেশ সচিব, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ওয়াসা, ডেসকোসহ সব পরিসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি, প্রয়োজন হলে একজন বিশেষজ্ঞ রাখতে বলা হয়েছে। এই কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক আবেদনের ভিত্তিতে এই আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গত বছরের ২১ জানুয়ারি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে হাইকোর্টে আবেদন করে এইচআরপিবি। এই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ঢাকার যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে সেসব এলাকা (কাজের স্থান) ঘেরাও করে কাজ করা এবং উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের কারণে ধুলাবালি প্রবণ এলাকায় দিনে দুইবার পানি ছিটাতে ঢাকার দুই সিটি মেয়র ও নির্বাহীগণকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেন। এই রুল এখন বিচারাধীন। এরই ধারাবাহিকতায় বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৪ নভেম্বর সম্পূরক আবেদন করা হয়।