৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:১৭

নারীরা যা হতে চায় হতে দেওয়া উচিত : মাবিয়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক : বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের ক্রীড়াঙ্গনে আসাটা একটু কঠিনই। অধিকাংশ মা-বাবাই চান তাদের মেয়েরা পড়াশুনা করুক। পড়াশুনা শেষে ভালো চাকরি করুক। ক্রীড়াক্ষেত্রে আসার জন্য মেয়েদের খুব বেশি উৎসাহিত করা হয় না সমাজ ও পরিবার থেকে। সমাজের একটা শ্রেণির মানুষের সমালোচনা ও পরিবারের বিরোধিতা থাকেই।

তারপরও সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ও পরিবারের বিরোধিতার শেকল ছিড়ে ক্রীড়াঙ্গনে আসছেন নারীরা। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। এনে দিচ্ছেন পদক, সাফল্য। বিশ্ব নারী দিবসে ক্রীড়াঙ্গনের এমন অদম্য নারীদের নিয়ে আমাদের আয়োজন।

২০১৬ ও ২০১৯ সাউথ এশিয়ান গেমসে ভারোত্তোলনে স্বর্ণজেতা মাবিয়া আক্তার সীমান্তের গল্প তবে শোনা যাক। সব বাঁধা উপেক্ষা করে ক্রীড়াক্ষেত্রে আসাটা কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল। কতোটা কঠিন পথ তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। আজ বিশ্ব নারী দিবসে তার চাওয়া সম্পর্কেও জানবো।

ক্রীড়াঙ্গনে মাবিয়ার পথচলাটা অবশ্য সহজ ছিল না। মাবিয়া যে পরিবেশ ও যে এলাকা থেকে উঠে এসেছেন সেখান থেকে উঠে আসাটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি ভারোত্তোলনের মতো ক্রীড়ায় নিজেকে যুক্ত করেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশকে এনে দেন সাফল্য। কঠিন পথচলার যে ধকল ও দেশপ্রেম সেটা উপচে পড়ে তার চোখের জলে। পদক নেওয়ার সময় জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে কেঁদে-কুটে একাকার হয়ে যান। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ এসএ গেমসেও স্বর্ণ জিতেন তিনি। গড়েন রেকর্ড। লক্ষ্য রেখেছেন ২০২১ সালেও স্বর্ণ জেতার।

ক্রীড়াঙ্গনে তার মতো নারীদের পথচলা নিয়ে তিনি  বলেছেন, ‘কঠিন তো অবশ্যই। কারণ হচ্ছে একটা মেয়ে মানুষ খেলায় আসবে সেটা তো কঠিন। বিশেষ করে আমি যখন খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম তখন কেউ স্পোর্টসে আসার কথা চিন্তাই করেনি। চিন্তা করেছে হয়তো। কিন্তু আমি যেখান থেকে উঠে আসছি, যে এলাকায় বড় হয়েছি সেখান থেকে তো অসম্ভব। তারপরও নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করে এসেছি। সাফল্য পেয়েছি। এখন কেউ কেউ ভাবে তাদের মেয়েকে স্পোর্টসে দিবে। কিন্তু ভারোত্তোলনে দিবে সেটা বলতে আমি এখনো শুনিনি। আসলে স্পোর্টসের বিষয়টি বলাটা যতো সোজা, খেলায় আসাটা ততো সোজা না। কারণ, পরিবার, প্রতিবেশীদের সাপোর্ট, এটা হয় না। বাংলাদেশের পরিবারগুলোকে আমি বলব মেয়েরা যেটা হতে চায় সেটা হতে দেওয়া উচিত। যদি কেউ খেলাধুলায় আসতে চায় তাহলে তাকে আসতে দেওয়া উচিত। আমরা এসেছি। ভালো করছি। ভবিষ্যতে তারাও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।’

ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের অংশগ্রহণ যে গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া দরকার ছিল সে গতিতে হচ্ছে না। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের অংশগ্রহণ কম। মাবিয়া আক্তার মনে করছেন জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা থাকলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে, ‘জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে স্পোর্টসে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে। বিশেষ করে একক ইভেন্টের খেলাগুলোতে। এর পাশাপাশি পরিবারের সমর্থন প্রয়োজন হবে। পরিবার যদি মেয়েদের খেলাধুলায় আসতে উৎসাহিত করে, সমর্থন করে তাহলে নারীদের অংশগ্রহণের গতি বাড়বে। স্পোর্টস করলে দুটি উপকার পাওয়া যায়। শারীরিকভাবে ফিট থাকা যায় ও সুস্থ থাকা যায়। পাশাপাশি ভালো করলে নিজের ও দেশের সুনাম বৃদ্ধি করা যায়। দেশের পতাকাকে ‍তুলে ধরা যায়।’

ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য হয় সেটার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমি ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল এশিয়া কাপ জিতে ইতিহাস গড়েছিল। আর সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্বকাপ জিতেছে। দুটি দলের সংবর্ধনার পার্থক্যটাই তো বলে দিচ্ছে বৈষম্যের কথা। হয়তো নারী-পুরুষের খেলায় কিছুটা পার্থক্য থাকে। কিন্তু এতোবেশি পার্থক্য নারীদের অংশগ্রহণ ও চলার পথ কঠিন করে দেয়।’

নারী দিবসে তার চাওয়া জানতে চাইলে মাবিয়া বলেছেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনে পুরুষরা যেরকম সুযোগ-সুবিধা পাবে, নারীদেরও তেমনটা যেন দেওয়া হয়। পুরুষরা যে প্রায়োরিটি পাবে, মেয়েদেরও ঠিক একই প্রায়োরিটি দিতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের প্রায়োরিটি আগে থাকা উচিত। আর যদি আমাদের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে সে প্রমাণ করবে দায়িত্ব পালন করতে পারে কিনা। না দিয়ে মুখে মুখে বললে হবে না।’

ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ২০১৬ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ৬৩ কেজি শ্রেণিতে স্বর্ণপদক জিতেন। এরপর কমনওয়েলথ ভারোত্তলন চ্যাম্পিয়নশিপে ৬৩ কেজি শ্রেণিতে স্বর্ণ জেতেন, তরুণ বিভাগে। আর দুইটি রুপা জিতেন জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ বিভাগে। সবশেষ নেপালে অনুষ্ঠিত ২০১৯ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ জিতেন তিনি।

প্রকাশ :মার্চ ৮, ২০২০ ৫:২০ অপরাহ্ণ