২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:০৫

নবম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান ও অঙ্ক ক্লাস নেন স্কুলের পিয়ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যিনি স্কুলের ফাইলপত্র ঠিক করে রাখেন, ঘণ্টা বাজান, প্রয়োজনীয় খাতা-নথি শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে চা পানি দেন তিনিই আবার মোটা বই, কলম-পেন্সিল নিয়ে ক্লাসরুমে যান। তবে পড়তে নয়, বরং পড়াতে।

তিনি কমল সিংহ। ভারতের হরিয়ানায় অম্বালার কাছে মাজরি গ্রামের গভর্নমেন্ট সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের পিয়ন তিনি।

সকালে স্কুলে পৌঁছে নানা প্রয়োজনীয় কাজের ফাঁকে ফাঁকে নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান ও অংক ক্লাস নেন তিনি। প্রতি দিনই এমন রুটিনে অভ্যস্ত কমল।

৪০০ জন শিক্ষার্থীর ১৯ জন শিক্ষকের স্কুলে পিয়ন কমল একদিন দেখেন, বেশির ভাগ শিক্ষকই সেদিন স্কুলে আসেননি। তারমধ্যে অঙ্কের শিক্ষক একজন তিনিও সেদিন আসেননি। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বন্ধ ছিল। বিষয়টা তার ভাল লাগেনি।

সোজা চলে যান স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে। জানান, নবম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান ও অঙ্ক ক্লাস সে দিনের জন্য তিনি করাতে চান।

কমলের কথা শুনে ও পরিস্থিতি বিচার করে বাধা দেননি প্রিন্সিপাল। পেশায় পিয়ন হলেও কমল যে পড়াশোনায় মেধাবী ও পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস, তা জানতেন প্রিন্সিপাল।

এর পরে নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা ‘কমল স্যার’-এর ক্লাস করে এতই খুশি হয় যে, এ বার তারাই প্রিন্সিপালের কাছে কমল সিংহেক দিয়ে ক্লাস করানোর আবেদন জানায়।

কমলকে আবার সুযোগ দেন প্রিন্সিপাল। দশম শ্রেণির ক্লাসে নিজে হাজির থাকেন। কমলের পড়ানোর দক্ষতা ও বিষয়ের প্রতি জ্ঞান দেখে অবাক হয়ে যান প্রিন্সিপাল।

কিছুদিন পরে বিদ্যালয়ের একমাত্র অঙ্কের শিক্ষক কাজে যোগ দেন। এর আগে ভোটের কাজ, খাতা দেখা, বোর্ডের পরীক্ষার খাতা দেখার সঙ্গে একাই এক সপ্তাহে প্রায় ৫৪টা ক্লাস করাতেন কমল। কমলের চাপ খানিকটা কমানোর চেষ্টা করেন প্রিন্সিপাল। সপ্তাহে ১৭-১৮টা ক্লাসের ভার দেন কমলকে।

কমলের ক্লাস নেওয়া আইনবহির্ভূত কিনা এ বিষয়ে হরিয়ানার ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসার সুধীর কালরা বোলেণ,  ‘‘কমল নিজে পদার্থবিজ্ঞানে পোস্টগ্র্যাজুয়েট। ফলে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়ানোর যোগ্যতা আছে তার। সরকারি নিয়মে নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ানোর যোগ্যতা পোস্টগ্র্যাজুয়েট। এখানে অনেক স্কুলেই পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। সঙ্গে ঘাটতি রয়েছে প্রয়োজনীয় শিক্ষকেরও। তাই স্কুলের দরকারের কথা ভেবে ও মানবিকতার খাতিরেই কমলের ক্লাস চালিয়ে নেওয়ায় আমাদের দিক থেকে কোনো অভিযোগ নেই। তবে স্কুলটিতে যাতে আরো বেশি করে পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, তার ব্যবস্থা চলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘কমল পিয়নের কাজেও ফাঁকি দেননি। সময় মেনে ঘণ্টা দেওয়া, শিক্ষকদের কাছে প্রয়োজনীয় ফাইল ও নথি পৌঁছনো, চা-পানি তদারকি সবটাই তিনি করেছেন।’

কমলের মতো উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ের এমন পিয়নের চাকরি রাজ্যের কর্মসংস্থানের অভাবকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে কিনা সে বিষয়ে হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী কনওয়ার পাল গুজ্জ জানান, উচ্চ শিক্ষিতদের মাত্র ১০-১২ শতাংশই এমন পদে চাকরি করেন। তবে তারা কিছু দিন কাজের পর উচ্চপদস্থ চাকরি পেয়ে যান।

কিন্তু কমল এখনো তেমন কোনো চাকরি পাননি বলে তার বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র : আনন্দবাজার

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০ ২:৫২ অপরাহ্ণ