২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৩১

বিষাক্ত বাতাসেও আমের মঞ্জুরি ও সুঘ্রাণ

‘ও মঞ্জুরি, আমার আমের মঞ্জুরি, আজ  হৃদয় তোমার উদাস হয়ে পড়ছে কি ঝরি!’, ফাল্গুনের বিষণ্ন বিপন্ন দমকা হাওয়া এলেই ধুলা আর দূষণের নগরীতেও দুম করে নাকে আসে আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। এবারও ঝেঁপে এসেছে আমের মুকুল, পৌষের মাঝামাঝি থেকেই গাছে গাছে উঁকি দিতে শুরু করলেও ফাল্গুনে এসে মাতাল করেছে চারপাশ।

মাজেদা খানম বীথি মুকুলে ভরা আমগাছের ছবি দিয়ে ফেসবুকে লেখেন, ‘ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে। এই নগরীতে থেকেও এমন প্রকৃতির স্বাদ পাওয়া সত্যিই ভাগ্য। চারপাশে শুধুই আমের মুকুলের গন্ধ! জানালার পাশে কোনও একটা গাছ যদি থাকে, সেই গাছ থেকে বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসা মৌ মৌ গন্ধে অবাকই হচ্ছেন নগরবাসী।’

রাস্না আকতার থাকেন মিরপুর ১২ নম্বরে। তার বাসার দুটো আমগাছ ভরেছে মুকুলে। তিনি বলেন, ‘এখানে একটা পচা ডোবা আছে। সেই ডোবার হাজা গন্ধ দূর করতে, মশা তাড়াতে, নানা উদ্যোগ নিয়ে ব্যস্ততায় ভুলেই যেতে হয় এখানেও সবুজ আছে, মুকুলের ঘ্রাণ আছে।’

মুকুল ভালো হতে কেমন পরিবেশ লাগে প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আশফাক আহমদ বলেন, ‘সাধারণত এ সময়টাতে শুষ্ক আবহাওয়া হলে সেটা মুকুলের জন্য ভালো। বৃষ্টি হলে ঝামেলা হয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে মুকুল ঝরে যাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এবার পুরো পৌষের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া শুষ্কই আছে। গত কয়েকদিনে দেশের নানা জায়গায় একটু বৃষ্টি হওয়ার আগে পর্যন্ত সব নিয়ন্ত্রণেই ছিল।’ মুকুল বেশি হলে ফলন ভালো হবে এমন কোনও বিষয় আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তেমন না। একবার মুকুল বেশি হয়, একবার গাছের গ্রোথ হয়, নতুন পাতা বেশি থাকে।’

কিছু দিনের মধ্যেই মুকুলগুলো প্রস্ফুটিত হবে মুকুল মঞ্জুরিতে। তার আগে পর্যন্ত এই ঘ্রাণ লেগে থাকবে। বৃষ্টি বেশি হলে অবশ্য এই ঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। নগরবাসী কংক্রিটের মধ্যে, সর্বোচ্চ দূষিত বায়ুর শহরে এমন বিতৃষ্ণা নিয়ে বাস করে যে, আশপাশে কোথাও সরিষা ফুল, কোথাও কাশফুল বা কোথাও গোলাপের বাগান হলে দলবেঁধে তা দেখতে যাওয়া, ছবি তোলা এখন খুব পরিচিত ঘটনা। গাছের উচ্চতার কারণে আমের মুকুলের সঙ্গে ছবি তোলার কোনও সুযোগ না থাকলেও, কেউ একজন মুকুলসহ গাছের ছবি দিলেই ফেসবুকে চলে ছেলেবেলা হাতড়ে বেড়ানো। এই সময়টাতে মুকুলের তীব্র গন্ধে আমবাগানে টেকা দায় হতো।

আমের ফলনের বেশিরভাগ নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানের মালিক রাশেদুল হাসান বলেন, ‘আশ্বিন-কার্তিক মাসে গাছের গোড়ায় কিছু রাসায়নিক বা জৈবসার দিতে হয়। এতে গাছের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। মুকুল ধরার সময় এলে কিছু নির্ধারিত কীটনাশক আছে, সেগুলো দিতে পারলে পোকা ধ্বংস হয়। এগুলো কোনোটিই ক্ষতিকর নয়, এগুলো দিতে হয়।’

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০ ৬:২৮ অপরাহ্ণ