দেশের সব শহর এলাকার বিদ্যুতের লাইন ২০২৫ সালের মধ্যে মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পায় দেখা যায়, ইতোমধ্যে এক হাজার ১১৮ কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘সৌন্দর্য বর্ধন, দুর্ঘটনা রোধ এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের শহর এলাকার বিদ্যুতের সব তার আমরা মাটির নিচে নিতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি বিতরণ কোম্পানিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, তারা পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি পরিকল্পন বাস্তবায়ন করতে শুরু করবে।’
মোহম্মদ হোসেইন আরও বলেন, ‘এরইমধ্যে সিলেটের একটি এলাকা আমরা তারবিহীন করতে পেরেছি। এরই ধারাবাহিকতায় সব শহরে বিদ্যুতের তার মাটির নিচে যাবে।’
এই কর্মপরিকল্পনায় দেখা গেছে, ভূগর্ভে বিতরণ লাইন নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। কোম্পানিটি এরইমধ্যে এক হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন মাটির নিচে নিয়ে গেছে। এছাড়াও তারা এখন আরও ৯৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেখা গেছে, এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, দুর্ঘটনা রোধ ও মেট্রোপলিটন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্যই সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এক সময় আমাদের উৎপাদন কম ছিল। এখন উৎপাদন বেড়েছে। বিতরণ ও সঞ্চালনে যে সমস্যা রয়েছে, তা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কর্মপরিকল্পনায় দেখা যায়, ডিপিডিসির আওতায় বর্তমানে ১৩২ কেভি লেভেলে ৩৭ দশমিক ৭২ কিলোমিটার,৩৩ কেভি লেভেলে ২৮৩ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার এবং ১১ কেভি লেভেলে ৬৭৯ দশমিক ৮১ কিলোমিটার, অর্থাৎ মোট এক হাজার এক কিলোমিটার বিদ্যুতের তার মাটির নিচে স্থাপন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ডিপিডিসির চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩২ কেভি, ৩৩ কেভি এবং ১১ কেভি লেভেলে আরও মোট ৯৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নির্মাণ করা হবে।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। প্রথম পর্যায়ে ধানমন্ডির বেশ কিছু এলাকার বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে যাবে। আগামী তিন বছরের মধ্যেই ধানমন্ডির একটি অংশকে তারবিহীন করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের পুরোটা, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকার তার মাটির নিচে নিতে সমীক্ষা করছি। একবছরের মধ্যেই কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।’
অন্যদিকে ডেসকোর আওতায় উত্তরা, পূর্বাচল, বসুন্ধরা, আফতাবনগর, টঙ্গী, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, গুলশান, বনানী এবং ভাটারা এলাকায় ১৬৫ দশমিক ৪২ সার্কিট কিলোমিটার ওভারহেড লাইনকে মাটির নিচে নেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডেসকোর অধীনে ৭০ দশমিক ৯৭ সার্কিট কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। লাইনের পাশাপাশি সাবস্টেশনগুলোও মাটির নিচে নিতে যাচ্ছে ডেসকো। এই সংস্থার আওতায় ৩৩টি সাবস্টেশনের মধ্যে ২৮টি রুটে ৪১টি ৩৩ কেভি লাইন মাটির নিচে নেওয়ার কাজ চলছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে এরইমধ্যে সিলেটের একটি এলাকায় বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নেওয়া হয়েছে। এ বিভাগের ৪৯ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে হজরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকাসহ মোট ৩২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নেওয়া হয়েছে। বাকি সিলেট এলাকাসহ কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ এলাকায় বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নিতে সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রাক্কলন, নকশা তৈরি এবং বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্ট প্রস্তুতি করতে অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি এনার্জিট্রোনকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পিডিবির সঙ্গে তাদের চুক্তি সই হয়।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেমন— খুলনা, যশোর ও বরিশাল সিটি এলাকায় বর্তমানে বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নিতে আন্ডারগ্রাউন্ড পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম প্রজেক্ট ইন ওয়েস্ট জোন এরিয়া নামে একটি প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও প্রকল্প প্রস্তাবটি এখনও তৈরি হয়নি।
উত্তরের জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) এর অধীনে রাজশাহী শহরের মিয়াপুর ১৩২/৩৩ কেটি উপকেন্দ্র পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এবং রংপুর শহরের লালবাগ ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র হতে কটকীপাড়া ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার ৩৩ কেভি বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নিতে খুব শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এছাড়া, বিদ্যুতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে (২০২১-২০২৫) রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের সব বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নিতে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে।