৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৫৫

মেয়াদ বাকি ৪৩ দিন : ডাকসুর বরাদ্দের এক টাকাও তুলতে পারেননি ভিপি নুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র দেড় মাস বাকি। ১০ মাসেও ডাকসু ভিপির জন্য বরাদ্দকৃত ৫ লাখ টাকার এক টাকাও তুলতে পারেননি ভিপি নুরুল হক নুর। নিজের বরাদ্দের একটি টাকাও ব্যয় করতে পারেননি এই ছাত্র প্রতিনিধি।

ডাকসু ভিপির অভিযোগ, বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলনে তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেনের ‘অদৃশ্য প্রভাবের’ কারণে টাকা তোলা সম্ভব হয়নি। তবে নুরের অভিযোগ মানতে নারাজ জিএস ও এজিএস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বার্ষিক বাজেট ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। শনিবার ডাকসুর কার্যনির্বাহী সভায় গত ৯ মাসের ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বাজেটের ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার মধ্যে ৯ মাসে ৮৩ লাখ ৫১ হাজার ৩০৪ টাকা উত্তোলন করেছেন ডাকসুর ২৫টি পদে থাকা নেতারা। অন্যদিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্পনসর থেকে ডাকসু ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৪ টাকা পেয়েছে। তবে ব্যয়ের খাতে ভিপি নুরের নামে কোনো হিসাব নেই।

ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্য জিএসের অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ তুলে ব্যয় করেছেন।

প্রায় তিন দশক পর গত বছরের ১১ মার্চ ছাত্রদের সরাসরি ভোটে ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। ভিপি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাদে বাদবাকি পদগুলোতে ছাত্রলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পায়। এই দুটি পদে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুই নেতা নুরুল হক ও আখতার জয়ী হন।

ডাকসুর কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ ৩৬৫ দিন। গত বছরের ২৩ মার্চ দায়িত্ব নেয়া বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হতে আর বাকি ৪৩ দিন।

ডাকসু নেতাদের দায়িত্ব নেয়ার পর ৩০ মে বাজেট পাস হয়। তাতে ভিপির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৫ লাখ টাকা। জিএসের জন্য তিন খাতে মোট ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে অভিষেক অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে ৩০ লাখ, সাধারণ অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে ১৭ লাখ টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে ৫ লাখ টাকা।

সম্পাদকদের মধ্যে ৭ জনের নাম বরাদ্দ রাখা হলেও এজিএস ও ১৩ জন সদস্যের জন্য বাজেটে কোনো বরাদ্দ ছিল না। জিএসের সহায়ক হিসেবে এজিএস ও ৯ জন সম্পাদকের সঙ্গে ১৩ জন সদস্যের কাজ করার কথা বলা হয়েছিল।

শনিবার ব্যয়ের যে হিসাব দেখানো হয় তাতে দেখা যায়, ডাকসুর ১৬ জন প্রতিনিধি নির্বাচনের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য খরচ করেছেন ৮৩ লাখ ৫১ হাজার ৩০৪ টাকা। এছাড়া ডাকসু কার্যালয় ব্যবস্থাপনা খাতে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অন্যরা টাকা তুলতে পারলেও পারেননি ডাকসুর প্রধান কর্মকর্তা ভিপি নুর।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু গত ৯ মাসে আমি একটি টাকাও তুলতে পারিনি। নুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাকে নামে মাত্র ডাকসুর এক্সিকিউটিভ কমিটিতে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যত খরচ হয়েছে, জিএস ও এজিএসের সিদ্ধান্তেই সব হয়েছে।

ভিপি নুরুল হক জানান, তিনটি চিঠিতে তিনি ৪০ হাজার টাকা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীদের র্যা গ ডে উদযাপনের জন্য ১০ হাজার, শামসুন নাহার হলের একজন অ্যাথলেটকে একটি রেসিং সাইকেল কেনার জন্য ১০ হাজার এবং একটি শিক্ষাসফরে বরাদ্দের জন্য আরও ২০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। এ জন্য তিনি জিএস ও এজিএসের অদৃশ্য প্রভাবকে দায়ী করেন।

এ বিষয়ে ডাকসুর কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, নুরুল হক টাকা চেয়ে পাননি—এমন ঘটনা তার জানা নেই। এক ছাত্রীকে (অ্যাথলেটও) রেসিং সাইকেল কিনে দিতে যে টাকা চেয়েছিলেন নুর, তা তার ‘ব্যক্তিগত বিষয়’। এ কারণে তা দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ডাকসুর টাকা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক কল্যাণে ব্যয় হবে, ব্যক্তিগতভাবে কারও জন্য এই টাকা খরচ করা যায় না।

ডাকসুর এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন ভিপি নুরের অদৃশ্য প্রভাবের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, নুরুর ওই অভিযোগ বালখিল্য আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়।

ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীও ডাকসুর ফান্ড থেকে কোনো টাকা তোলেননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ফান্ড থেকে আমি কোনো টাকা তুলিনি। ডাকসুর ১৩ জন সদস্যের তো কোনো বরাদ্দ নেই। তারা যেসব কাজ করেছে, সব আমার বরাদ্দ থেকে ব্যয় করেছে। আমি আমার ব্যক্তিগত কোনো কাজ বা প্রোগ্রামের জন্য টাকা তুলিনি।

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০ ৬:০২ অপরাহ্ণ