২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৫২

জাতির জনক’ সম্পর্কে মন্তব্য করায় তোপের মুখে বিজেপি নেতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের ‘জাতির জনক’ মহাত্মা গান্ধী একজন ‘চতুর বেনিয়া’ (চালাক ব্যবসায়ী) বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির শাসক দল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। জাতির জনক’ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করার পর শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক বিতর্কও।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে শনিবার এক জনসভায় অমিত শাহ বলেন, কংগ্রেস কোনো নীতি-বিচারধারার দল ছিল না। স্বাধীনতা অর্জনের এক বিশেষ মাধ্যম ছিল। দূরদর্শী হিসেবে মহাত্মা গান্ধী সেটি জানতেন। তাই একজন চালাক ব্যবসায়ী হিসেবে স্বাধীনতার পরেই তিনি কংগ্রেসকে ভেঙে দিতে বলেছিলেন।মহাত্মা গান্ধীর চশমাকে লোগো বানিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ যেমন হয়েছে, তেমনই খাদির ক্যালেন্ডারে গান্ধীকে সরিয়ে জায়গা করেছে মোদীর ছবি। ‘জাতির জনক’কে নিয়ে অমিত শাহের এমন মন্তব্যের পর নানা মহলে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। টুইটারে অনেকেই বিজেপিকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, যত দিন গোটা বিশ্ব ভারতকে একটা মহান দেশ হিসেবে দেখবে, তত দিনই মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে চর্চা চলবে।কেউ আবার লিখেছেন, বিজেপির পক্ষে মহাত্মা গান্ধীকে বোঝা সম্ভব নয়! অনেকে বলেছেন, আসলে বিজেপি তো স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে কিছু বলার সুযোগ পায় না! কারণ ওদের কোনো নেতা স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয়নি। তাই এ সব কথা ওরা সহজেই বলতে পারে!

ক্ষুব্ধ মহাত্মা গান্ধীর পৌত্র তথা পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও। বিজেপি সভাপতির মন্তব্য ‘কুরুচিকর’ বলার পাশাপাশি তার বক্তব্য, মহাত্মা গান্ধী এমন মন্তব্য শুনলে হাসতেন! বিজেপি সভাপতির মন্তব্য ঘিরে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে কংগ্রেস-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী মহাত্মার এক উদ্ধৃতি দিয়ে টুইট করেন। যেখানে মহাত্মা বলেছিলেন, ‘যখনই হতাশা হয়, আমি ইতিহাস স্মরণ করে দেখি, সত্য ও ভালবাসা সব সময় জিতেছে। রূঢ় শাসক ও হত্যাকারীদের কখনও অপরিহার্য মনে হয়। কিন্তু শেষে তাদের পতন অনিবার্য’।

শিলিগুড়িতে মমতা ব্যানার্জী বলেন, ‘শাসক দলে আছে বলেই যা খুশি বলা যায়, এটি কারও ভাবা উচিত নয়। ইচ্ছে করে এই মন্তব্য করা হয়েছে! আমি দুঃখিত, স্তম্ভিত, শোকাহত। অমিত শাহের ক্ষমা চাওয়া উচিত।ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ বলেন, ‘সাধারণ আরএসএস কর্মী এই ধরনের কথা বললে তাকে গুরুত্ব না দিলেও চলে। কিন্তু শাসক দলের সভাপতি কীভাবে এমন মন্তব্য করেন?’

রামচন্দ্র গুহের মতে, ‘আধুনিক ভারতের মহোত্তম এই ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তিনি কিছু না জেনেই কি এমন বলেছেন? আর কিছু না হোক, অন্তত একজন গুজরাটি হিসেবেও তো তার জানা উচিত গান্ধীজি কীসের জন্য গোটা জীবন লড়াই করেছেন!’এত বিতর্কের মুখেও বিজেপি অবশ্য চুপ। কিন্তু দলের কিছু নেতা বলছেন, তাদের সভাপতি তো ভুল কিছু বলেননি! গুজরাটে এ ধরনের কথা বলার চল আছে। আর মহাত্মা গান্ধী যে কংগ্রেসকে ভেঙে দিতে বলেছিলেন, সেটি তো ঐতিহাসিক সত্য। এতে স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামীদের তো কোনো অপমান করা হচ্ছে না।আর একদল বিজেপি নেতার বক্তব্য, এই নিয়ে কংগ্রেস ও বিরোধীরা যেভাবে রে-রে করে উঠেছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে অমিত শাহের তীরটি সঠিক জায়গায় গিয়ে বিঁধেছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জুন ১১, ২০১৭ ১:১০ অপরাহ্ণ