২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:০৯

বনভোজনের টাকা না পেয়ে পাঠ্যবই ফেরত নিলেন প্রধান শিক্ষক

স্কুলের আনন্দ আয়োজন ছাত্রীর জন্য হয়ে উঠেছে বিষাদের কারণ। অভিযোগ খোদ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

নীলফামারী জেলার জলঢাকা গাবরোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কাজলী রানী রায়। সম্প্রতি বিদ্যালয় থেকে বনভোজনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক চাঁদা ধরা হয়। কিন্তু দরিদ্র বাবার সন্তান কাজলীর পক্ষে চাঁদা দেয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে তাকে স্কুল থেকেই বের করে দেয়া হয়েছে। এর আগে ফেরত নেয়া হয়েছে তার পাঠ্যবই, যেগুলো সে সরকারিভাবে পেয়েছিল বিনামূল্যে।

এই অপমান মেনে নেননি কাজলীর বাবা কৃষ্ণচন্দ্র। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মেয়েকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর।

জানা গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিদ্যালয়ের বার্ষিক বনভোজনের জন্য ২৫০ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর পরিবারের পক্ষে এই টাকা দেয়ার সামর্থ না থাকায় অনেকে ২০০ টাকা চাঁদা দেন। কিন্তু বেঁকে বসেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক । তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আরো ৫০ টাকা না দিলে বনভোজনে নেয়া হবে না। এ পর্যায়ে কাজলীর বাবা অতিরিক্ত ৫০ টাকা দিতে অপারগতা জানান এবং আগের জমা দেয়া ২০০ টাকা ফেরত চান। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জানিয়ে দেন, যেহেতু কাজলী বনভোজনে যাবে না, তাই ওর এই স্কুলে আর পড়ালেখাও করতে হবে না। তিনি  কাজলীর পাঠ্যবই ফেরত চান এবং কাজলীকে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করেন।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে কাজলী কান্নায় ভেঙে পরে। কাজলীর বাবা কৃষ্ণচন্দ্র বলেন, ‘বনভোজনের অতিরিক্ত ৫০ টাকার জন্য কাজলী বাড়ি এসে কান্নাকাটি করে। আমি তখন স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের আমার অপারগতার কথা বলি। তখন শিক্ষকরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যেতে বলে। এতদিন শুনে এসেছি, সরকারি বিদ্যালয়ে বিনা টাকায় পড়ালেখা হয়। এখন তো দেখছি মাত্র ৫০ টাকার জন্য তারা আমার মেয়েকে বের করে দিল।’

প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কাজলীকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। কাজলীর বাবা কেন মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে আমি বলতে পারব না।’

তবে কাজলীর বাবার সঙ্গে টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির বিষয়টি স্বীকার করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ওই ঘটনার সমাধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা করে দিয়েছেন। পরে আমরা কাজলীকে বনভোজনেও নিয়ে গিয়েছিলাম এবং তার বইও ফেরত দিয়েছি।’

এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলা বলেন, ‘আমি কাজলীর বাবার লিখিত অভিযোগ পেয়েই তদন্তের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন আমার হাতে আসেনি।’

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০ ৬:৫৭ অপরাহ্ণ