ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি প্রচার এখন তুঙ্গে। গতানুগতিক প্রচারের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে নানা কৌশল। মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট ও পথসভার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা। তবে প্রায় সব প্রার্থীর প্রচারেই যুক্ত হয়েছে ‘নির্বাচনি গান’। গানের মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। এতে বিনোদন পাচ্ছেন কর্মী-ভোটার সবাই।
সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে যেসব গান বাজছে তার মধ্যে ‘জয় বাংলা জিতবে আবার নৌকা/শেখ হাসিনার সালাম নিন, জয় বাংলা-নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ অন্যতম। এই গানটি এবছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের থিম সং হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি ও অন্যান্য প্রার্থীও নিজেদের মতো করে নির্বাচনি গান তৈরি করেছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইকে বাজছে এসব গান।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের প্রচারণায় স্থান পাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে হচ্ছে−‘ও আমার দাদি গো, ও আমার নানি গো, ও আমার ভাবি গো, শোনেন চাচি-খালা, সবার চাইতে আমার তাপস ভাই যে ভালা, শেখ ফজলে নূর তাপস সবার চাইতে ভালা।’ ‘ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের। তাপস ভাইয়ের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা।’
শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে একটি গান তৈরি করেছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামাল হোসেন। গানটিতে সুর ও কণ্ঠ উভয় দিয়েছেন তিনি। গানটি হচ্ছে−‘ঢাকাবাসীর মনের ভাষা বুঝতে পারেন শেখ হাসিনা, জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারেন শেখ হাসিনা/নগর পিতা নির্বাচনে প্রার্থী তাপস ভাই, তাপস ভাইয়ের নৌকা মার্কায় ভোট দিবো সবাই। চল যাই চল যাই…।’ গানটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ থেকেই এই গানটি তৈরি করেছি। গনটিতে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। গানটি পরিবেশের পর মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সারা ঢাকায় গানটি বাজছে।’
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের প্রচারণায় প্রচারিত গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো−‘ভাই বোন মুরুব্বিগণ সকলের ভোট চাই, মেয়র খোকার যোগ্য সন্তান সবার প্রাণের ইশরাক ভাই। ঢাকা দক্ষিণে ইশরাকের ভাইয়ের নাই তুলনা নাই’, ‘খুশির খবর আজ বলি গানে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচনে/মেয়র প্রার্থী ইশরাক ভাইয়ের তুলনা যে নাই, ইশরাক ভাইয়ের ধানের শীষে সবার ভোট চাই।’
অপরদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলামের প্রচারেও স্থান পাচ্ছে একাধিক গান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য−‘আসবে আবার শুভ দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন; সিটি মেয়র দরকার, আতিক ভাইয়ার। আতিক ভাইয়ার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। উন্নয়নের শপথ নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। দক্ষ দেখে পক্ষ নিন, আতিক ভাইকে ভোট দিন।’, ‘শুনেন আমার খালা গো, নৌকা মার্কা ভালা গো, শুনেন আমার মামি গো, নৌকা মার্কা দামি গো। আতিক ভাইয়ার দুই নয়ন, উত্তর সিটির উন্নয়ন। ঢাকা সিটির উন্নয়নকে গতিশীল করতে, শেখ হাসিনা দিলেন আতিক ভাইকে।’
বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচারণায় যেসব গান বাজছে সেগুলোর মধ্যে—‘এসে গেছে নির্বাচন ভোট দাও জনগণ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তোমাদের প্রয়োজন। তাবিথ ভাইয়ের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন।’ ‘বাংলাদেশটা স্বাধীন হয়েছে রক্তের বিনিময়ে, তবুও কান্না থামছে না মা বাংলাদেশকে নিয়ে। স্বাধীন বাংলা হয়নি স্বাধীন মানুষের চিৎকার। লড়াই করে ফিরে পেতে হবে মানুষের অধিকার। হারিয়ে যাচ্ছে কৃষক শ্রমিক মজুরি টানাতে, ধানের শীষকে অস্ত্র বানাও বুকের আগুন দিয়ে। তালা ভেঙে সব মুক্ত করো বুকের সাহস নিয়ে।’
মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের নামেও নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নানা গান বাজছে। পাড়া-মহলা ও অলিগলিসহ প্রার্থীদের নির্বাচনি অফিসে সাউন্ড সিস্টেমে এসব গান বাজানো হচ্ছে। গান শুনতে ভিড় করছে উৎসুক জনতা।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তরুণ গায়কদের কদর বেড়ছে। প্রতিটি গান গাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন তারা। ব্যক্তিভেদে আরও বাড়ছে এই পারিশ্রমিক।
নির্বাচনি গান তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ। তেমন একটি প্রতিষ্ঠান ‘আশিক ভিশন’। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর আশরাফ ফারুক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ খুবই সংগীতপ্রিয়। যদি সব প্রচারেই সংগীতকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তাহলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রার্থীরা তাদের নামে গান তৈরি করতে আসেন। এক্ষেত্রে একটা গান যখন তৈরি করা হয়, তখন এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত সবাই উপকৃত হন। বর্তমানে নির্বাচন মৌসুমে সংগীতাঙ্গনে একটা চাঙ্গাভাব রয়েছে।’
গানের মাধ্যমে প্রচারণার প্রসঙ্গে উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি গানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে−জয়বাংলা, জিতবে এবার নৌকা। এই গানের সঙ্গে যে ভাব রয়েছে তাতে নেতাকর্মীরা খুবই উজ্জীবিত হয়ে পড়েন। আমরা বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগে গেলে তারা এই গান বাজিয়ে জনসংযোগে অংশ নেন।’ এছাড়া শুভাকাঙ্ক্ষীরা নিজেদের উদ্যোগে গান তৈরি করে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করছেন।