৫০ বছরের জীবনে ৩১ বছরই তিনি লাশ কেটেছেন। প্রায় ১০ হাজার লাশ কাটা ছেঁড়া করেছেন তিনি। কিন্তু এতো লাশ কাটার পরও ডোমের চাকরিটি স্থায়ী হয়নি তার। এ বিষয়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর খবর প্রকাশ করা হয়।
১৯ বছর বয়সে ডোমের পেশা বেছে নেন তাজুল। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ডোমের দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি। প্রধান ডোম ছাবু মিয়া মারা যাওয়ার পর তাজুল ইসলাম এই হাসপাতালে একাই লাশ কাটার দায়িত্বে ছিলেন।
স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল দরিদ্র তাজুলের সংসার। নিজের জমি না থাকায় সরকারি জমিতে ছোট বাড়ি করে পরিবার নিয়ে ছিল তার বসবাস।
মৃত্যুর কিছুদিন আগেও আক্ষেপ করে তাজুল ইসলাম বলেছিলেন- ‘লাশ কাটা ছেঁড়া করতে করতে আমার জীবনের প্রায় ৩১ বছর পার হলো। জীবনের বাকী সময়টুকুও এভাবেই যাবে। আমি কোনদিন দায়িত্বে অবহেলা করিনি। মা মারা যাবার দিনও তাকে দাফন করে এসেও লাশ কেটেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত আমার চাকরিটি স্থায়ী হয়নি। যিনি স্থায়ী ছিলেন তিনি মারা গেছেন। বর্তমানে আমি একাই লাশ কাটি। যেদিন লাশ থাকে না, সেদিন আমার বাজারও হয় না। না খেয়ে পরিবার নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয় আমাকে।’
তাজুল বলেছিলেন, ‘প্রতি লাশ কাটার বিনিময়ে মাত্র দুই থেকে তিনশ টাকা পাই। আর বেওয়ারিশ লাশ থেকে কোনো টাকা পাই না। প্রতিদিন লাশ আসে না। যেদিন লাশ আসে না, সেদিন আমার বাজারও হয় না।’
তাজুল ডোমের চাকরিটি স্থায়ী করার জন্য বারবার দাবি জানিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। সেই আক্ষেপ নিয়েই ১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে মারা গেছেন ডোম তাজুল। ২০ জানুয়ারি তাকে দাফন করা হয়। এখন আর চাকরি স্থায়ী হওয়ার আবেদন জানাতে পারবেন না তাজুল। কারণ তিনি আর এ ভুবনে নেই। অন্যদিকে এ অবস্থায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাজুলের পরিবারের ভবিষ্যত।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল ডা. দেবাশীষ দাস বলেন, ‘নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে তার ডোমের চাকরি স্থায়ী করতে প্রক্রিয়া চলছিল। এ প্রক্রিয়ায় পড়লে তার চাকরি স্থায়ী করা সম্ভব হতো। যাই হোক, মারা যাওয়ার খবর শুনে তাকে কিছু আর্থিক সহযোগীতা করা হয়েছে। আরো করা হবে। চাইলে তাজুলের ছেলে এ পেশায় কাজ করতে পারবে।’