২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২৮

আমনের ন্যায্যমূল্য যাচ্ছে না কৃষকের পাতে

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : চলতি আমন মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কুষ্টিয়ার কৃষক।

কুষ্টিয়া ধান উৎপাদনের অন্যতম জেলা। কিন্তু ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়ায় ক্রমেই ধানের আবাদ থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। যা ভবিষ্যতে ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে অশনি সংকেত বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষকের অভিযোগ, ত্রুটিপূর্ণ সরকারি নীতিমালা, সিন্ডিকেট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলাসহ নানা অনিয়মের কারণে চলতি আমন মৌসুমে তারা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জেলার কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ মৌসুমে ৮৮হাজার সাড়ে ৬শ হেক্টর জমিতে হেক্টর প্রতি ৫.২ মেট্রিক টন হিসেবে আমন উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ, ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। সরকারিভাবে জেলার ৬টি উপজেলায় ন্যায্যমূল্যে ১০৪০ টাকা দরে ধান কেনা হচ্ছে মাত্র ১১ হাজার মেট্রিক টন।

ধান ক্রয়-বিক্রয়ে সংশ্লিষ্টদের হিসেব মতে, কৃষকের কাছে বিক্রয়যোগ্য ধান রয়েছে প্রায় ৩লক্ষ মেট্রিক টন। সরকারিভাবে ক্রয়কেন্দ্রেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ধান ক্রয়ে লক্ষমাত্রা বরাদ্দে সম্প্রসারণসহ এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হলেই কেবল কৃষকের কাঙ্খিত ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, ধানক্রেতা মিলার ও জেলা প্রশাসন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা গ্রামের কৃষক মুন্নাফ মন্ডলের অভিযোগ, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকসহ ধান উৎপাদনে আনুষঙ্গিক খরচ যোগান দিতে প্রতি বছরই আমাদের ঘাড়ে চাপছে লোকসানের বোঝা।

তিনি বলেন, ‘প্রতি মন ধান উৎপাদনে ন্যুনতম খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৮শ টাকা, কিন্তু বাজারে ধান ক্রেতা সিন্ডিকেটের বেঁধে দেয়া সাড়ে ৫শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকায় মন ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’

দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে প্রতিমন ধান কেনার প্রচারণা চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যত: কৃষকের সাথে তামাশা করছেন। অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের কাছে সরকারি জিম্মি হয়ে আছে ধান ক্রয় কার্যক্রম। কৃষক নয় এমন লোকদের নামে তারা বরাদ্দ দেখিয়ে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করছে।’ তিনি বিদ্যমান এই অনিয়মের অবসান দাবি করেন।

বাংলাদেশ মেজর হাস্কিং ও অটো রাইচ মিল মালিক সমিতি, কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সাধু বলেন, ‘ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের এই দুর্দশা দীর্ঘদিনের। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে সুনির্দিষ্ট ও কঠোর নীতিমালা প্রণয়নসহ তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই কেবল কৃষক বাঁচাবে দেশ বাঁচবে।’

সচেতন নাগরিক কমিটি কুষ্টিয়ার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘সরকার  নির্ধারিত দরে প্রতিমন ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করতে সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাতে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া দালাল চক্র কৃষকের এই ন্যায্য অধিকার ছিনিয়ে নিতে না পারে। সেই সাথে কুষ্টিয়া জেলায় কৃষকের কাছে এই আমন মৌসুমে বিক্রয়যোগ্য প্রায় ৩লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যেহেতু ধানের একটা নির্ধারিত দর বেঁধে দিয়েছেন সেই নির্ধারিত দরেই যাতে সব বাজারে কৃষক ধান বেচতে পারে সে লক্ষে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমন মৌসুমে সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে ধানক্রয় কার্যক্রমকে আগামীতে আরও সম্প্রসারিত করার চিন্তা করছে সরকার। কুষ্টিয়া জেলায় উৎপাদিত ৪ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন ধানের মধ্যে কৃষকের কাছে বিক্রয়যোগ্য ৬০% ভাগ  ধানের ন্যুনতম পরিমাণ ক্রয় বরাদ্দ সম্প্রসারিত হলে কৃষকের এই দুর্দশা লাঘব হবে।’

তিনি বলেন, ‘জেলায় ২ লাখ ৯০ হাজার কৃষক ধানসহ অন্যান্য ফসলাদি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।’

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ‘বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার কৃষক বাঁচাতে কাজ করছেন। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধানক্রয়ের বিষয়টি প্রতি বছরই সম্প্রসারিত হচ্ছে। আগামীতে ধানক্রয় কার্যক্রমে বরাদ্দ আরও সম্প্রসারিত করাসহ প্রকৃত কৃষকের তালিকাটাও আরও বেশি যাচাই-বাছাই করে করা হবে। যাতে সরকারের এই উদ্যোগ সম্পূর্ণটাই কৃষকের উপকারে আসে।’

প্রকাশ :জানুয়ারি ১৬, ২০২০ ১২:৩১ অপরাহ্ণ