২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:৩৯

ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা নিয়ে উদ্বিগ্ন খুলনার কৃষক

দেশজনতা অনলাইনঃ গত কয়েকদিন ধরে খুলনা অঞ্চল ঘন কুয়াশায় আছন্ন হচ্ছে। বেলা সাড়ে ৯টায়ও সূর্যের দেখা মেলে না। এর ফলে কুয়াশা ও অধিক শীতের কবলে পড়ছে বোরো বীজতলা। আমনে কারেন্ট পোকার আক্রমণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বোরো ধানের বীজতলাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ কারণে বীজতলার চারার গোড়া বা পাতা পচা রোগ এবং চারা হলুদ হয়ে দুর্বল হওয়াসহ ক্ষতির শঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কৃষি বিভাগ সাদা পলিথিন শিট দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে। পরামর্শ অনুযায়ী, বীজতলার পরিচর্যা করা সম্ভব হলে ঝুঁকির আশঙ্কা কমে আসবে বলেও আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
খুলনা জেলা কৃষি দফতরের সূত্রমতে, এবার জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার ৯১৫ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার ৩৩৫ হেক্টর বেশি। জেলায় বার্ষিক খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯১ মেট্রিক টন। ২০১৭-২০১৮ বছরে খাদ্যশস্য (চাল, গম) উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে জেলায় বোরো আবাদ হয় ৫০ হাজার ৬৪৫ হেক্টর, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৫১ হাজার ১২০ হেক্টর, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫২ হাজার ৩শ’ হেক্টর, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৫৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর। উৎপাদনও হয় ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ১৫ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৭ মেট্রিক টন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ২ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টন, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৬ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৭ মেট্রিক টন।
ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক মো. আতিয়ার রহমান জানান, এমনিতেই কারেন্ট পোকার আক্রমণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপর আবার ঘন কুয়াশা এবং অতিরিক্ত শীতে বোরো বীজতলাও হুমকির মুখে রয়েছে। এ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষক রামকৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ধান বিক্রি করতে গেলে, ধানের দাম নেই। কিন্তু বীজ কিনতে গেলে দাম আকাশ ছোঁয়া। তারপরও নতুন স্বপ্ন নিয়ে বোরো বীজতলা বুনেছি। এখন কুয়াশা ও শীতে কী হয় বুঝতে পারছি না।
রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা এলাকার কৃষক মো. জাফর মল্লিক বলেন, আমনতো গেলো কারেন্ট পোকার পেটে, ধান পাইনি। আবার বোরো বীজ বুনেছি। এখন পিছিয়ে আসার পথ নেই, আশায় বুক বেঁধে আছি।
এদিকে, ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত শীত থেকে বোরো বীজতলা রক্ষায় রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে কৃষক ও জনসাধারণকে সচেতন করছেন।
তিনি ঘন কুয়াশা ও বেশি শীতে বোরো ধানের বীজতলায় করণীয় সংক্রান্ত একটি পোস্টে উল্লেখ করেছেন, চারার বৃদ্ধিতে নিম্ম তাপমাত্রার প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য ঘন কুয়াশা ও বেশি শীতের সময়ে বোরো ধানের বীজতলা সকাল ১০টা থেকে সাদা পলিথিন শিট দিয়ে ঢেকে রেখে সন্ধ্যার আগে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় পানি সেচ দিয়ে বীজতলার চারা ডুবিয়ে দিতে হবে এবং সকালে সেই পানি বের করে দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে দড়ি টেনে দিয়ে বীজতলার চারায় জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে, বীজতলায় প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি ও ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো ধানের বীজতলার চারা হলদে হয়ে গেলে প্রতি শতক জমিতে ২৮০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম পটাশ ও ৬০ গ্রাম জিপসাম সার মিশিয়ে বীজতলায় স্প্রে করতে হবে এবং অতিরিক্ত শীতে বীজতলার চারার গোড়া বা পাতা পঁচা রোগ দেখা গেলে ব্যাভিস্টিন বা মেনকোজেব গ্রুপের যেকোনও একটি ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। যতদিন শৈত্যপ্রবাহ থাকে ততদিন এ পদ্ধতি চালিয়ে যেতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, ‘ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত শীত থেকে বোরো বীজতলা রক্ষা করতে হলে প্রথমত পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং ছত্রাকনাশক প্রয়োগ, ভোরের সেচের উষ্ণ গরম পানি ছিটানো এবং রাতে ঠান্ডা পানি নামিয়ে দিতে হবে। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’ বড় ধরনের কোনও বিপর্যয় না হলে এবারও বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘বুলবুল’র আঘাতে খুলনা জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া রূপসার জাবুসা বিলসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কারেন্ট পোকার আক্রমণেও আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রকাশ :জানুয়ারি ১৫, ২০২০ ৩:১৭ অপরাহ্ণ