ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা বাজারে মোটা দানার মসুর ডালের মূল্য প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে আমদানি করা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে এই ডালের মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা। সরু দানার মসুর ডালের মূল্যও ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে যা ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই ডাল গত সপ্তাহে ১০৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। ১২০ টাকার পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। এই সময়ে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা খুশি হলেও ক্রেতারা বিষয়টি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। এ প্রসঙ্গে মুগদা এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের মূল্য বেশি হবে কেন? দেশের জমি থেকে আসা পেঁয়াজও যদি ১৬০ টাকা কেজি কিনতে হয় তাহলে বাজার মনিটরিং করছেন কারা?’ তার অভিযোগ—‘নিত্যপণ্যের বাজার এখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে।’
এদিকে, সরকারি বিপণন সংস্থা—ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা ছিল, এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
২০১৯ সালের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে পেঁয়াজ, রসুন, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য চড়া ছিল। তবে, চাল, ডাল, তেল ও চিনির মূল্য কম থাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে ছিল। যদিও বাজারে এই পণ্যগুলোর মূল্য এখন বাড়ছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের পাশাপাশি গত এক মাসেরও কম সময়ে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের লিটারে বেড়েছে ২০ টাকা। এক মাস আগে যে সয়াবিন তেলের মূল্য ছিল ৬৫ টাকা, এখন সেই সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। ৬০ টাকা লিটারের পাম অয়েল (খোলা) বিক্রি হচ্ছে ৮৬ টাকায়। দেড় মাসের ব্যবধানে বাজারে পাম অয়েলের মূল্য বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখন প্রতিকেজি পাম অয়েল (খোলা) বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর মসলা ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতিকেজি এলাচে বেড়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এক মাস আগে প্রতিকেজি এলাচের মূল্য ছিল ১৫০০ টাকা। এখন সেই এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়লে এর খেসারত সবাইকে দিতে হয়। কারণ, মূল্য যতই বাড়ুক, তবু মানুষকে কিনতে হয়।’ তিনি বলেন, জিনিসপত্রের মূল্য বাড়লে বিপাকে পড়েন সীমিত আয়ের মানুষ। বিশেষ করে মজুরি ও বেতননির্ভর মানুষেরা। তারা জীবনযাত্রার মান কমাতে না পারার কারণে বাধ্য হয়ে সঞ্চয় ভেঙে চলার চেষ্টা করেন।’
এদিকে শীতের অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। পটল, করলা, গাজর, টমেটো, শসা, শিম, বেগুন প্রতিকেজি ৪০-৫০ টাকা, নতুন আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পেঁপে আর মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।